বোমার মা-বাবা আছে
মনির তালুকদার
নানা সময়ে নানা দেশ পারমাণবিক বোমা, রাসায়নিক বোমাসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ংকর সব বোমা তৈরি করেছে। কয়েক বছর আগেই যুক্তরাষ্ট্র মারাত্মক ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাসম্পন্ন “মাদার অফ অল বম্বস” বানিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। আফগানিস্তানে সব বোমার “মা বোমা” ফেলে ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র যখন নিজেদের শক্তিমত্তা নতুন করে জানান দিতে চাইলো, রাশিয়া তখন “বাবা বোমার” প্রদর্শনী করে যেন তারই জবাব দিয়েছিল। রাশিয়ান সেনাবাহিনীর উপপ্রধান আলেক্সান্দ্রার রাশকিন দাবি করেছিলেন–যুক্তরাষ্ট্রের নিক্ষেপ করা “মাদার অব অল বম্বস” এর চেয়ে অনেক শক্তিশালী তাদের নির্মিত “ফাদার অব অল বম্বস”। তাদের হিসাবে মা বোমা ৮ টন উচ্চ বিস্ফোরক থেকে ১১ টনটি বেশি শক্তি উৎপাদন করে। ১৫০ মিটার বৃত্তের মধ্যে এটি সব ধ্বংস করে দেয়। অন্য দিকে ফাদার অব অল বম্বস এর চেয়ে চারগুণ বেশি ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে।
তবে আরেক ক্ষমতাধর দেশ চীন এমন এক বোমা বানানোর দাবি করেছে, যা কোনো শহরে বিস্ফোরিত হলে সঙ্গে সঙ্গে কার্যত উড়ে যাবে বা ধ্বংস হয়ে যাবে ইন্টারনেট ফোনসহ সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পালস সমৃদ্ধ ওই ক্ষেপণাস্ত্রের নাম দেয়া হয়েছে “ব্ল্যাক আউট বোমা”।
চীনের দাবি, শব্দের চেয়ে ছয়গুণ বেশি গতিসম্পন্ন ব্ল্যাক আউট বোমা পাল্লা দেবে তিন হাজার দুইশত কিলোমিটারের বেশি। বেইজিংয়ের একাডেমি অব লঞ্চ ভেহিকল–টেকনোলজির বিজ্ঞানীদের দাবি–এই ক্ষেপণাস্ত্রকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে– যা নজরদারি চালানোর জন্য মহাকাশে যে, আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম রয়েছে সেই ব্যবস্থাকেও ধোঁকা দিতে পারে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মতো দেশগুলো নিজেদের নজরদারি উপগ্রহের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে নজর রাখে। ফলে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ হলে তার নির্দিষ্ট সময় এবং তথ্য তাদের হাতে চলে যায়। এর মাধ্যমে তারা আন্দাজ করতে পারে, সেই ক্ষেপণাস্ত্র কোথায় আঘাত হানতে চলেছে। তবে সেই ব্যবস্থাকেও বোকা বানাতে পারে চীনের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র। লক্ষ্যস্থলে পৌঁছানোর পর ওই বোমা থেকে রাসায়নিক বিস্ফোরণ হতে শুরু করে। ফ্ল্যাক্স কমপ্রেশন জেনারেটরের মাধ্যমে একটি শক এনার্জি তৈরি হয়–যা দশ সেকেন্ডের মধ্যে লক্ষ্যস্থলের বিভিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান রাশিয়া ইউক্রেনে প্রথমবারের মতো বাবা বোমা ব্যবহার করে। বাবা বোমার মারাত্মক ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট একদিনে তৈরি হয়নি। এর পেছনে অনেক কারণ আছে। ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণকে না বুঝে ওই সংঘাতের কোনো ব্যাখ্যাই করা যাবে না। সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকার সময়ে তাদের ও মিত্র দেশগুলোর ওয়ারশ চুক্তি ছিল। সোভিয়েত সরকারের পতনের পরে ওয়ারশ চুক্তিও ভেঙে যায়। তবে ন্যাটোর অবসান হয়নি, বরং পূর্ব ইউরোপে তাকে ক্রমশ সম্প্রসারণ করা হতে থাকে। ন্যাটোকে “শান্তির কাঠামো” বলে বর্ণনা করে একের পর এক দেশকে তারা সদস্যপদ দিতে থাকে। পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, পুরানো যুগোস্লাভিয়া ভেঙে তৈরি হওয়া ক্রোয়েশিয়া, মন্টেনিগ্রো, স্লোভেনিয়া, স্লোভাকিয়া ছাড়াও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রজাতন্ত্র এস্টোনিয়া, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়াকে ন্যাটোর সদস্য করা হয়েছে। গত ৩০ বছরে ন্যাটোর পূর্বদিকে বেড়েছে ১২৮৯ কিলোমিটার। যে কেউ মানচিত্র খুলে দেখতে পাবেন কীভাবে উত্তর আটলান্টিক নিয়ে আসা হয়েছে কৃষ্ণসাগর পর্যন্ত। রাশিয়ার দোরগোড়ায় নিয়ে আসা হয়েছে ন্যাটোকে। শুধু ন্যাটোর ভৌগলিক প্রসারই ঘটেনি, ন্যাটোর নতুন সদস্যদের অস্ত্রসজ্জিত করা হয়েছে। পোল্যান্ডে যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র বসানো হয়েছে সেখান থেকে রাশিয়ার দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। ইউক্রেনকে ন্যাটোর ঘাটি বানানো গেলে রাশিয়ার ভেতরে যেকোনো সময়ে মিসাইল ছোঁড়া সহজ হয়ে যাবে। তার যথেষ্ট প্রস্তুতি চলছিল। জার্মান সংবাদপত্র “ডের স্পিগেল” একটি নথি প্রকাশ করে দেখিয়েছে– ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে যাবে না। দুই জার্মানির মিলনের সময়ে ১৯৯১ সালের মার্চে বনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেনের ওই সভায় জানানো হয়েছিল জার্মানির এলবে নদীর পরে ন্যাটো আর প্রসারিত হবে না। পোল্যান্ডকেও ন্যাটোর সদস্য করা হবে না। ওয়ারশ চুক্তি বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে আর থাকবে না, এই মর্মেই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে। তবে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি। ১৯৯৭ সালেই পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ জর্জ এফ কেনানের সতর্কবাণী ছিল, শীতল মৃদু পরবর্তী সময়ে মার্কিন নীতির সবচেয়ে মারাত্মক ভ্রান্তি হবে ন্যাটোর সম্প্রসারণ। তবে তাতে কান দেয়া হয়নি। সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ মার্কিন রাষ্ট্রদূত জ্যাক ম্যাটলক এখনকার সংকট সম্পর্কে বলেছেন, শীতল যুদ্ধের পরে ন্যাটোর সম্প্রসারণ না ঘটলে বর্তমান সংকটের কোনো ভিত্তি থাকত না। রাশিয়াকে নিয়েই ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলা উচিত ছিল, তা হয়নি। সেই সময়ে কূটনৈতিক মহলে বারংবার বলা হয়েছিল, ন্যাটোর সম্প্রসারণ ঘটলে রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত কোনো না কোনো দিন অনিবার্য হয়ে উঠবে। কিন্তু বিশেষ করে মর্কিন শিল্প-সামরিক জোট অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির নতুন বাজার হিসেবে পূর্ব ইউরোপে লাফিয়ে পড়ে। যথেচ্ছ সামরিকীকরণ হতে থাকে। অনেকে এ কারণেই এবারের সংঘাতকে একটি “পূর্বঘোষিত যুদ্ধের আখ্যান” বলে চিহ্নিত করেছেন।
মস্কো থেকে মার্কিন প্রশাসন এবং ন্যাটোকে পাঠানো ২০০৮ এ মার্কিন দূতাবাসের একটি বার্তা উইকিলিকস ফাস করে। সেখানে ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে রাশিয়ার নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ ছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল। ইউক্রেনের মধ্যে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার পক্ষে বিপক্ষে আড়াআড়ি ভাগ রয়েছে। এমন সেই বিভাজন যা দেশের মধ্যে গৃহযৃদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে। ঠিক তা-ই হয়েছে।
অনেকে প্রশ্ন করেছেন একটি স্বাধীন দেশ কার সঙ্গে চুক্তি করবে, তা সে দেশের ব্যাপার। তা ঠিক। কিন্তু ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়া আর কোনো দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক চুক্তি করা এক কথা নয়। ন্যাটো একটি যুদ্ধ জোট। ন্যাটো বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করে থাকে। ন্যাটোর হস্তক্ষেপে পূর্ব ইউরোপের ভূগোল বদলে গেছে। ন্যাটোর সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও ইউক্রেনে প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। ন্যাটো রাশিয়া ফাউন্ডিং অ্যাক্ট অন মিউচুয়াল রিলেশনস এর মূল বক্তব্যই ছিল ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে কমব্যাট বাহিনী মোতায়েন করবে না। সেই চুক্তি লংঘন করেই রাশিয়াকে ঘিরতে একের পর এক দেশে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভোলোদোমির জেলেনেস্কি মিউনিখের নিরাপত্তা সম্মেলন থেকে ফিরেই ঘোষণা করলেন– ১৯৯৪ সালের বুদাপেস্ট চুক্তি ছিড়ে ফেলে ইউক্রেনকে পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত করা এখনই প্রয়োজন। পুতিন নয়, পরমাণু অস্ত্রের প্রসঙ্গ প্রথম তুলেছেন জেলেনেস্কি। অথবা তাকে দিয়ে তোলানো হয়েছে।
ইউক্রেনে দুদশক ধরে তৎপরতা চালিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমে হয়েছিল “কমলা বিপ্লব”। ২০১৪ সালে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা হয়। রাষ্ট্রপতি ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। ওই অভ্যুত্থান তৈরি করা হয়েছিল মার্কিন মদদে। ওই অভ্যুত্থানের পেছনে মার্কিনী অন্যতম মস্তিষ্ক ছিলেন ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। যিনি এখন মার্কিন রাজনৈতিক বিষয়ের আন্ডার সেক্রেটারি। ইউক্রেনে সরকার পালটে কাদের বসানো হবে তা-ও তিনি ঠিক করেছিলেন। “মাইদান” অভ্যুত্থানে অতি দক্ষিণপন্থি জাতিয়তাবাদীদের মার্কিন ঋণ দেবার ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি। সিআইএ ওই অভ্যুত্থানকে সাজিয়েছিল। একটি ছোট তথ্য এই যে, সাবেক মার্কিন উপ-রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনকেই ইউক্রেনে অ পারেশনের মাথা বলে চিহ্নিত করা হয়।
ওই অভ্যুত্থানের পরেই ইউক্রেনে রুশ ভাষাভাষিরা আক্রান্ত হতে থাকেন। নতুন সরকারের প্রথম সিদ্ধান্তই ছিল রুশ আর সরকারি ভাষার মর্যাদা পাবে না। ইউক্রেনের এক তৃতীয়াংশ মানুষ রুশ ভাষাভাষি। ক্রিমিয়াগামী বাসে, ওডেশায় আক্রমণে রুশভাষিদের হত্যা করা হয়। ওই অভ্যুত্থানের প্রত্যক্ষ ফলাফল ছিল ক্রিমিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। সেখানে এবং পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুগানস্কে ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাকামীদের তৎপরতা বাড়ে। ক্রিমিয়ায় গণভোটে বিপুল গরিষ্ঠতায় মানুষ রাশিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার রায় দেন। দোনেৎস্ক, লুগানস্কে ইউক্রেনের সেনাদের সঙ্গে গত আট বছর ধরে সংঘর্ষে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন। ওই দুই অঞ্চল নিজেদের স্বাধীন প্রজাতন্ত্র বলে ঘোষণা করলেও রাশিয়ার স্বীকৃতি এতদিন মেলেনি। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর আগেরদিন রাশিয়া স্বীকৃতি দেয়। ২০১৪-১৫ তে মিনস্কে ইউক্রেনের সরকার এবং বিচ্ছিন্নতাকামীদের মধ্যে সংঘর্ষ-বিরতির মধ্যস্থতায় বসে ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়া। সেখানে বলা হয়েছিল ইউক্রেন ওই দুই অঞ্চলকে স্বায়ত্তশাসন দেবে। তবে ইউক্রেন সে পথে হাঁটেনি। বরং দেশের সংবিধানকে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয় যাতে সেই স্বায়ত্তশাসন অসম্ভব হয়।
বর্তমানে ইউক্রেন নয়া নাৎসি এবং শ্বেতাঙ্গ জাতিবিদ্বেষীদের ঘাঁটি হয়ে উঠেছে। অ্যাজভ বাহিনীর নাম এখন সংবাদে এসেছে। নয়া নাৎসি এবং শ্বেত আধিপত্যের মতাদর্শে বেড়ে ওঠা উগ্র জাতীয়তাবাদীদের সংগঠনের মধ্যে থেকে ওই বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে। দুই জাতিবিদ্বেষী সংগঠন প্যাট্রিয়ট অফ ইউক্রেন এবং স্যোশাল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির মধ্যে থেকে অ্যাজভ বাহিনী গড়ে ওঠে। দীর্ঘ সময় ধরেই এই দুই সংগঠন অভিবাসী, সংখ্যালঘু এবং রোমা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাচ্ছিল। ২০১৪ সালে ইউক্রেনে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে উৎখাত করার জন্যে যে বিক্ষোভ তৈরি করা হয়েছিল সেখানে অন্যতম অংশগ্রহণকারী ছিল ওই দুই সংগঠন। ২০১৪ সালের নভেম্বরেই ওই দুই সংগঠনের মিলিত অ্যাজভ বাহিনীকে সরাসরি দেশের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তারা নয়া নাৎসি জেনেও পদক্ষেপ নেয়া হয় তাদের পক্ষে। সাবেক রাষ্ট্রপতি পেট্রো পোরোশেংকো বলেছিলেন, “এরাই আমাদের সেরা যোদ্ধা, সেরা স্বেচ্ছাসেবক”। ইউক্রেনই বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে নাৎসিদের সরকারি সেনাবাহিনীতে নেওয়া হয়েছে। প্যাট্রিয়ট অব ইউক্রেন এবং স্যোশাল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি দুই সংগঠনেরই নেতা ছিলেন আন্দ্রেই বিলেৎস্কি। তার অনুগামীরা তাকে ডাকতেন “শ্বেত শাসক বলে। ২০১০ সালে বিলেৎস্কি ঘোষণা করেন, “ইউক্রেনের জাতীয় লক্ষ্য হলো নিম্নশ্রেণির জাতির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধে বিশ্বের শেতাঙ্গদের নেতৃত্ব দেওয়া। ২০১৬ সালে জাতিসংঘের রিপোর্টে অ্যাজভ বাহিনীকে মানবাধিকার লংঘনের অজস্র অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। দোনবাসে গণহত্যা এবং ধর্ষণের অভিযান চালানোর জন্যেও তাদের চিহ্নিত করা হয়। ২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছিল তাদের সেনারা অ্যাজভ বাহিনীর সঙ্গে কোনো মহড়া বা প্রশিক্ষণে অংশ নেবে না। পরের বছরেই পেন্টাগনের চাপে ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। মার্কিন কংগ্রেসেও দাবি উঠেছিল ওই বাহিনীকে “বিদেশি সন্ত্রাসবাদী শক্তি” হিসেবে চিহ্নিত করার। ইউক্রেনের সরকারের মদদে অ্যাজভ গোটা ইউরোপের নয়া নাৎসিদের সামরিক প্রশিক্ষণের কাঠামো হয়ে উঠেছে। নানা দেশ থেকে অতি দক্ষিণপন্থি এবং নয়া নাৎসিরা এসে তাদের কাছে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে যাচ্ছে।
পূর্বাপর ঘটনাক্রম ইঙ্গিত করছে ইউক্রেনকে দিয়ে রাশিয়ার সীমান্তে ন্যাটোকে এনে ফেলার ছক তৈরিই ছিল। বস্তুত, এখানেই ঘুমিয়ে থাকার ব্যাপার নয়। রাশিয়াকে কবজা করা, পূর্ব দিকে আরও আগানো, প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরে মার্কিনী আধিপত্য ও উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলে চীন পর্যন্ত পৌঁছানোর নকশা মার্কিনী সামরিক নথিপত্রেই যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। এখন বিশ্বযুদ্ধের কথা বলা হচ্ছে–তার আগাম পরিকল্পনা কারা করছে?
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে একটি পরিচিত কথা আছে–আমেরিকার বন্ধু হওয়ার থেকে শত্রু হওয়া ভালো। শত্রু হলে আমেরিকা কেনার চেষ্টা করতে পারে–বন্ধু হলে বিক্রি করে দেবে। ইউক্রেনকে এখন আমেরিকা বিক্রি করছে তাদের বিশ্ব রণনীতি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে। যা ক্ষয়ক্ষতি হবার ইউক্রেনের হবে, ফায়দা লুটবে–আমেরিকা আর তার মিত্ররা।
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ চলমান। পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন তাদের সম্পত্তি, এটা তারা পুনর্দখল করবে। তাই যুদ্ধ কখন শেষ হবে তা বলা যায় না। যুদ্ধ চলবে দীর্ঘদিন।
লেখক : গবেষক ও লেখক
Login to comment..