আবার সংঘাতে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

একতা বিদেশ ডেস্ক : ফের একবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান সীমান্ত। আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের তরফে দাবি করা হয়েছে, আর্মেনীয় সেনাবাহিনীর আক্রমণে তাঁদের ৭জন সেনা জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ১০জন। অপরদিকে আর্মেনিয়ার তরফে দাবি করা হয়েছে, সীমান্তের উল্টো পার থেকে হওয়া আক্রমণে তাঁদের একজন সেনা জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন। আজারবাইজান সেনার হাতে আটক হয়েছেন ১৩জন। যদিও পরবর্তীকালে রাশিয়ার হস্তক্ষেপে আপাতত শান্তি ফিরেছে ওই অঞ্চলে। প্রাক্তন দুই সোভিয়েত রাষ্ট্রের মধ্যে ২০২০ সালে বিতর্কিত নাগোর্নো কারবাখ অঞ্চলের দখল নিয়ে যুদ্ধ বেধেছিল। ৬সপ্তাহ ধরে চলা সংঘাতে প্রাণ হারান ৬৬০০’র বেশি মানুষ। সেই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে রাশিয়া এবং তুরষ্ক। আজারবাইজানকে সামরিক সাহায্য করে তুরষ্ক, এবং আর্মেনিয়ার সহায় হয় রাশিয়া। মস্কো সূত্রে খবর, উত্তেজনা প্রশমিত করতে আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু। তারপর থেকে বরফ গলতে শুরু করে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনইয়ান রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। সূত্রের খবর, আর্মেনিয়ার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে মস্কোর হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন তিনি। এদিকে পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্ত অঞ্চলে হিম ঠাণ্ডায় প্রাণ ওষ্ঠাগত কয়েক হাজার অভিবাসীর। কোনো দেশই তাদেরকে গ্রহণ করতে রাজি নয়। এসব অভিবাসী চান পোল্যান্ডে প্রবেশ করতে। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের সীমান্ত প্রহরীরা। এ নিয়ে আটকে পড়া এসব অভিবাসীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়েছে। নিক্ষেপ করা হয়েছে কাঁদানে গ্যাস। জলকামান থেকে ছিটানো হয়েছে পানি। পক্ষান্তরে অভিবাসীরা প্রহরীদের দিকে নিক্ষেপ করেছে ইটপাটকেল। ভয়ানক নিম্ন তাপমাত্রায় ওই অঞ্চলে শিশু, নারী ও যুবকদের অবস্থা বিপর্যয়কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাধ্য হয়ে এসব মানুষ পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে অগ্রসর হলে প্রহরীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পোল্যান্ডের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সেনা সদস্য ও প্রহরীদের দিকে ইটপাথর নিয়ে হামলা করেছে অভিবাসীরা। তারা জোর করে পোল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা করছে। স্থানীয় এনজিওগুলোর জোট গ্রুপা গ্রানিকা সীমান্তে এসব অভিবাসীকে মানবিক সহায়তা দিচ্ছে। এর কর্মকর্তা মার্তা সিমান্দারস্কা আল জাজিরাকে বলেছেন, পোল্যান্ডের শক্তি প্রয়োগ পুরোপুরি অন্যায়। এই সমস্যা একেবারে শুরুতেই সমাধান করা উচিত ছিল। পোল্যান্ড যে শক্তি প্রয়োগ করছে তা শুধু বেআইনিই নয়, একই সঙ্গে অমানবিক। ওদিকে সংঘর্ষে কোনো অভিবাসী আহত হয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি। তবে কমপক্ষে একজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আর যে কোনও মুহুর্তে অসাবধানতা বসত রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে পশ্চিমী জোটের। ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর দুইপক্ষের মধ্যে সম্পর্কের এতটা অবনতি এর আগে ঘটেনি। এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন ব্রিটেনের সামরিক বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ জেনারেল নিক কার্টার। তিনি বলেন বহু মেরু বিশিষ্ট বিশ্বে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়া তুলনায় সহজ, কারন প্রতি রাষ্ট্র স্বতন্ত্র ভাবে নিজের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষে ছুটছে। এরফলে ঠান্ডা যুদ্ধের বা দ্বিমেরু বিশ্বের সময়কালের কূটনৈতিক অস্ত্রগুলি ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। তারফলেই যুদ্ধ ঠেকানো কঠিনতর হয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রথম থেকেই সজাগ থাকতে হবে। কারণ একবার পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে গেলে আর কোনও অঙ্ক কষেই ফের একবার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সাম্প্রতিক পোল্যান্ড-বেলারুস সীমান্তের উত্তেজনাকে মাথায় রেখেই এমনটা জানিয়েছেন নিক কার্টার। শরনার্থী ইস্যুতে ইতিমধ্যেই বিবাদে জড়িয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য পোল্যান্ড এবং রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী বেলারুস। সীমান্ত উত্তেজনা যেই পর্যায় পৌঁচেছে, তাতে যেকোনও মুহূর্তে ন্যাটো তথা পশ্চিমী জোট এবং রাশিয়া মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। এরইমধ্যে আরও উত্তাপ বাড়িয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সাম্প্রতিক মন্তব্য। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পুতিন বলেন কৃষ্ণসাগরে ন্যাটোর সামরিক মহড়া রাশিয়ার জন্য বড়সড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তিনি সামরিক ভাষাতেই এর পাল্টা দেওয়ার হুশিয়ারি দেন।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..