সেজান কারখানায় অগ্নিকাণ্ড

কেবল মালিক নয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরের প্রধানদেরও বিচার দাবি

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

একতা প্রতিবেদক : নারায়ণগঞ্জের সেজান কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ঢাকা কমিটি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ দেশের অধিকাংশ কারখানাকে শ্রমিকের জন্য মৃত্যুফাঁদ উল্লেখ করে বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডে, ভবন ভেঙে শ্রমিক হত্যার পর যথাযথ বিচার না হওয়ায় এ ধরণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। নেতৃবৃন্দ সেজান কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শুধু মালিককে নয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরের প্রধানদের গ্রেপ্তার, বিচার ও নিহত-আহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দাবি করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের দায়িত্বহীনতা ও কাজের উপযুক্ত পরিবেশবিহীন এ ধরণের কারখানা গড়ে উঠার সুযোগ দেওয়ার কারণে দুর্ঘটনা নামের হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে। নেতৃবৃন্দ দায়িত্বহীনতার কারণে শিল্প ও শ্রম মন্ত্রীকে অপসারণেরও দাবি জানান। গত ১৩ জুলাই বেলা ১২টায় রাজধানীর পল্টন মোড়ে সিপিবি’র ঢাকা কমিটির সভাপতি মোসলেহউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল, শ্রমিকনেতা কাজী রুহুল আমিন। সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা কমিটির নেতা মানবেন্দ্র দেব। সমাবেশে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, করোনা মহামারীতে মানুষ মাঠে নামতে পারছে না, এই সুযোগে দেশে বহু অপরাধ-অপকর্ম হচ্ছে। তিনি বলেন, সেজান কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এদের ওপর ভরসা করা যায় না। তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ও গণতদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানান। তিনি যার যার অবস্থান থেকে এ ধরণের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, লুটেরা শাসক গোষ্ঠীর উচ্ছেদ ছাড়া এসব সংকটের সমাধান হবে না। এজন্য সারা দেশে গণসংগ্রাম, গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে স্বৈরাচারি, অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতন ঘটাতে হবে। রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সেজান কারখানায় যারা পুড়ে কয়লা হল, তাদের অধিকাংশই শিশু-কিশোর। এই সমাজ ব্যবস্থায় বেঁচে থাকতে এই বয়সের শিশু-কিশোররা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। আর মালিক এই মৃত্যু নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলছে। কারণ এসব মালিকরা ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় আছে। ভোটবিহীন সংসদে এরাই আধিপত্য বিস্তার করে আছে। তিনি বলেন, শুধু মালিককে নয়, কারখানা পরিদর্শকসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত সব দপ্তরের প্রধান ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। তিনি সকল কালকারখানায় উপযুক্ত কর্মপরিবেশ ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান। ডা. সাজেদুল হক রুবেল বলেন, অতীতে তাজরীন গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কারখানায় অগ্নিকাণ্ড, ভবন ধসে শ্রমিক হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হলেও পরে তারা ম্ক্তু হয়ে নিরাপদ জীবন-যাপন করছে। সেজানের গ্রেপ্তারকৃত মালিক হাসেমের ক্ষেত্রেও এ ধরণের ঘটনা ঘটবে ন, া তার নিশ্চয়তা কে দেবে? তিনি বলেন, এ সরকার মালিকপক্ষের, শ্রমিকবিরোধী সরকার। তিনি গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত করে অন্যায় অবিচার প্রতিরোধের আহ্বান জানান। কাজী রুহুল আমিন তার বক্তৃতায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও আহত শ্রমিকদের নামমাত্র ক্ষতিপুরণ প্রত্যাখ্যান করে আইএলও’র সনদ অনুযায়ী ক্ষতিপুরণ দেওয়ার দাবি জানান। সভাপতির বক্তৃতায় মোসলেহউদ্দিন বলেন, কারখানার নামে মৃত্যুফাঁদ বন্ধ না করা পর্যন্ত কমিউনিস্টরা তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। তিনি করোনার মধ্যেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। ‘শ্রমিক হত্যাকারী সেজান জুস কারখানার মালিকের বিচার চাই’, ‘শ্রমিক হত্যার বিচার চাই’, ‘কলকারখান প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কাজ কী?’, ‘কারখানায় শ্রম আইন বাস্তবায়ন কর’, ‘নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর কারখানা চাই’, ‘কারখানা কেন মরণফাঁদ?’ ইত্যাদি দাবি লেখা ফেস্টুন নিয়ে সিপিবির নেতা–কর্মীরা ঘণ্টাব্যাপী এই বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..