সামনে কি আর ভয়াবহ সময়

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
দেশে করোনার ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছেই। প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণের হার। আগে সংক্রমণের হার রাজধানীতে বেশি থাকলেও এখন উত্তরবঙ্গে এর প্রকোপ বেশি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, বড় ধরনের বিপদের মুখে আছে দেশ। এই অবস্থার মধ্যে চলমান লকডাউন আরও এক মাস বাড়ানো হয়েছে। যদিও অফিস-আদালত পুরোদমে খুলে দেওয়া হয়েছে। যেদিন লকডাউন বাড়ানো হয়েছে, তার পরদিনই আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, রাজধানীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ শতাংশের দেহে ‘ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট’ (ভারতীয় ধরন) পাওয়া গেছে। গত মে মাসের শেষ ও জুন মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে মোট ৬০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ৬০ জনের মধ্যে ৪১ জনের শরীরেই ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এরপর বেশি পাওয়া গেছে বিটা ভ্যারিয়েন্ট (দক্ষিণ আফ্রিকান ধরন)। বাকিগুলো অন্যান্য ধরনের। দেশে গত ৮ মে প্রথম ‘ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট’ শনাক্ত হয়। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর পরই মে মাসের মাঝামাঝি থেকে ভারতীয় সীমান্তবর্তী ১৫টি জেলায় রোগী দ্রুত বাড়তে শুরু করে। গত কিছুদিন ধরে সারা দেশেই রোগী বাড়তে শুরু করেছে। এই ‘ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট’-এর করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার কিছুদিন আগে থেকেই ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন বেশিরভাগ জেলায় লকডাউন ঘোষণা করে। কোনো কোনো জেলায় একাধিকবার লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। তারপরেও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এদিকে আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে দৈনিক করোনা রোগী শনাক্ত হাজারের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ঢাকায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের পরপর সীমান্ত এলাকায় করোনার যে প্রকোপ শুরু হয়েছিল, তার প্রভাব পড়েছে রাজধানীসহ অন্যান্য জেলায়। ধীরে ধীরে বন্যার মতো এটা ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসাসহ নানা কারণে মানুষের ঢাকামুখী হওয়া এখানে প্রভাব রেখেছে। তাঁরা আরও বলছেন, যারা পাসপোর্ট নিয়ে ভারত থেকে এসেছেন, তাদের হয়তো প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে যারা সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা সেভাবে হয়নি। এটাও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমণ বৃদ্ধির একটা বড় কারণ হতে পারে। পরিস্থিতিই বলে দিচ্ছে, বাংলাদেশ এখন এক ভয়াবহ বিপদের দিকেই যাচ্ছে। এই অবস্থায় সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকে বারবারই বলা হচ্ছে, জনগণের গাফিলতির কারণে এটা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। এটা অস্বীকার করা উপায় নেই যে, সাধারণ মানুষের মধ্যে জনসচেতনতার অভাব রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের অবহেলা আর দুর্নীতির দায় কে নেবে? করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ব্যর্থতা আড়াল করা যাবে? স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি এখন মানুষের মুখে মুখে। সারাবছর ধরে গণমাধ্যমে এই খাতের দুর্নীতির চিত্র প্রকাশিত হয়। কিন্তু কয়টা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়েছে? এমনকি জাতীয় সংসদের সদস্যরা এসবের সমালোচনা করেছেন। সরকারি, বিরোধী দল কিংবা সরকারের শরিক দলের সদস্যরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি-অনিয়ম ও অদক্ষতার কঠোর সমালোচনা করছেন। কেউ কেউ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো নিজেই বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভুলের কারণেই টিকা পেতে দেরি হচ্ছে। যে কারণে দেশের প্রায় ১৪ লাখ মানুষ এখনো টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারেনি। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এত কিছুর পরেও নিজেদের ঢোল পিটিয়েই চলছে। তাতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। মানুষও স্বাস্থ্য সেবার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। তাই এখনও সময় আছে, ভারতের মতো ভয়াবহ সর্বনাশা কিছু ঘটার আগেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে। নাহলে এর দায় সরকারকেই কাঁধেই বর্তাবে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..