একতা প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, প্রবৃদ্ধির আসক্তিতে মত্ত সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে। যেকোনো প্রক্রিয়ায় প্রবৃদ্ধি দেখাতে সরকারের যে প্রচেষ্টা, তা ব্যর্থতাকে আড়ালের কৌশল মাত্র।
কর্মসংস্থানমুখী উন্নয়ন বাজেটের দাবিতে দেশব্যাপী যুব ইউনিয়নের বিক্ষোভ কর্মসুচির অংশ হিসেবে ৯ মে ঢাকায় পুরানা পল্টন মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এ কথা বলেন।
যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাফিজ আদনান রিয়াদের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল ইসলাম জুয়েল। উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. সাজেদুল হক রুবেল, জাহাঙ্গীর আলম নান্নু, সহসাধারণ সম্পাদক হাবিব ইমন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি গোলাম রাব্বি খান, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আজিম।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও সমাজের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ এখন জীবন-জীবিকার ভয়াবহ সংকটে। এই মুহূর্তে বৃহত্তর তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০১৯ এর তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৪.৯৯ শতাংশ। তবে যুবসমাজের বেকারত্বের হার ১১.৯ শতাংশ, যা জাতীয় গড়ের আড়াইগুণেরও বেশি। বেকারদের মধ্যে যুবকের সংখ্যা ৭৯.৬ শতাংশ।
২০১৯ সালের বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতি তিনজন স্নাতকের মধ্যে একজন বেকার। অথচ সরকার সেই দিকে যথাযথ দৃষ্টি না দিয়ে বন্ধ্যা প্রবৃদ্ধি সৃষ্টিতে আগ্রহী। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও, কর্মসংস্থান সমস্যা সমাধানে তারা সাফল্য দেখাতে পারেনি। যে উন্নয়ন পরিকল্পনায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না, তা যতই চকচকে হোক না কেন, প্রকারান্তরে তা ফাঁপা ও সরকারের ব্যর্থতাকে আড়ালের অপকৌশল মাত্র।
বক্তারা বলেন, গত বছর করোনার অভিঘাতে চাকরিচ্যুত হয়েছিলো শতকরা ৩৬ জন মানুষ। অনেকের চাকরি থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত বেতন-ভাতা পাননি। করোনা সংকটে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েই বিপদগ্রস্ত আছে এখনো। কোভিড-১৯ এর কারণে নতুন করে দারিদ্র্য বাড়ছে। বিআইডিএস বলছে, নতুন ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের কাতারে যুক্ত হয়েছে। অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ বা মন্দার কারণে জনগণের চাকরির ক্ষতি হচ্ছে; নিয়মিত বেতন না পাওয়া, কম বেতন পাওয়া- বিশেষ করে বেসরকারী চাকুরিজীবীদের বেলায় এমনটি ঘটছে। অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ গ্রামে ফিরে গেছেন সময়ের সাথে তাল মেলাতে না পেরে। চাকরির বাজার হ্রাস পাবার কারণে অনেক তরুণ হতাশ হয়ে পড়ছে।
বক্তারা আরও বলেন, করোনার প্রথম ৪ মাসেই বেকারত্ব বেড়েছিলো ১০ গুণ। আর্থিক সংকটে পড়া ৪৬ দশমিক ২২ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় ভেঙে এবং ৪৩ শতাংশের বেশি পরিবার আত্মীয়স্বজনের সাহায্য-সহায়তার ওপর নির্ভর করে সংসার চালিয়েছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শ্রমবাজারের জন্য দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত দক্ষ কর্মীদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম নয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পড়াশোনা চাকরির বাজারের চাহিদা মেটাতে পারছে না। কলেজের স্নাতকদের মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশ পূর্ণকালীন বা খ-কালীন কর্মরত, বেকার অর্ধেক। যুব নারী গ্র্যাজুয়েটদের বেকার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, এবং স্নাতকোত্তর হওয়ার দুই বছর পরে তাদের ৩৩ শতাংশই পুরুষ স্নাতকদের বিপরীতে বেকার অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
যুব ইউনিয়ন বলছে, আমাদের বিভিন্ন নীতিমালায় যুবকদের বেকারত্বকে অর্থনীতির একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। জাতীয় যুবনীতি-২০১৭ তে যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়া হয়নি। নীতিমালায় তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হলেও কোনো কার্যকর পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না।
‘আমরা বেকারত্বের অভিশাপ দেখতে চাই না, আমরা যুবকদের হতাশ দেখতে চাই না, আমরা যুবকদের উদ্যোগী হিসেবে দেখতে চাই। তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য নতুন চাকুরি সৃষ্টি করা বা কর্মসংস্থানের উদোগ গ্রহণের জন্য বাজেটে একটি বিশেষ বরাদ্দ রাখা এখন সময়ের দাবি। বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে বিভিন্নভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য একটি কার্যকর উপায় বের করতে হবে,’ সমাবেশে বলেন বক্তারা।