লাগাতার আন্দোলনে পাটকল শ্রমিকরা

Posted: 01 ডিসেম্বর, 2019

একতা প্রতিবেদক : বকেয়া মজুরি পরিশোধ, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) বাতিল, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের পিএফ গ্রাচ্যুইটির টাকা প্রদান, শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি নিয়মিত পরিশোধ, পাট মৌসুমে পাট ক্রয়ের অর্থ বরাদ্দসহ ১১ দফা দাবিতে খুলনা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা লাগাতার আন্দোলন করছে। চলছে ভুখা মিছিল, প্রতীকি অনশন, বিক্ষোভ মিছিল ও সভা-সমাবেশ। পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ১১ দফা দাবিতে এই আন্দোলন চলছে। ভুখা মিছিল, গেটে গেটে প্রতীকী অনশন ছাড়াও ২ ডিসেম্বর ধর্মঘটের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল, ৩ ডিসেম্বর ভোর ৬টা থেকে পর দিন ভোর ৬টা পর্যন্ত পাটকলে ধর্মঘট ও বিকেল ৪টায় সব গেটে সভা, ৮ ডিসেম্বর আমরণ অনশনের সমর্থনে গেট সভা এবং শপথগ্রহণ, ১০ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে শ্রমিকদের পরিবার-পরিজন নিয়ে সব মিল গেটে আমরণ গণঅনশন। খুলনা: পাটকল শ্রমিকদের ডাকা ছয় দিনের কর্মসূচির মধ্যে প্রথম দিন গত ২৫ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে খুলনা নগরীর খালিশপুর বিআইডিসি সড়কে ভুখা মিছিল বের করা হয়। এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল শ্রমিকরা স্ব স্ব মিলগেটে সভা করে। এ সময় শ্রমিক নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) বাতিল, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের পিএফ গ্রাচ্যুইটির টাকা প্রদান, শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি নিয়মিত পরিশোধ ও পাট মৌসুমে পাট ক্রয়ের অর্থ বরাদ্দসহ ১১ দফা মেনে নেওয়ার দাবি জানান। গেট সভায় বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক সরদার আব্দুল হামিদ, যুগ্ম আহ্বায়ক সাহানা শারমিন, সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ নেতা হুমায়ুন কবির খান, মুরাদ হোসেন, আবু দাউদ, দীন মোহাম্মদ, বেল্লাল মল্লিক, আব্দুল মান্নান, কাউসার আলী মৃধা, মো. হানিফ প্রমুখ। পরে পাটকল শ্রমিকরা থালা-বাসন হাতে নিয়ে নগরীর খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে ভুখা মিছিল বের করে। শ্রমিকদের ভুখা মিছিলটি খালিশপুর বিআইডিসি সড়ক প্রদক্ষিণ করে নতুন রাস্তা হয়ে স্ব স্ব মিল গেটে গিয়ে শেষ হয়। এরপর গত ২৭ নভেম্বর সকাল ৮টায় মিলের উৎপাদন বন্ধ করে পাটকলের প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক ছয়দিনের আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে প্রতীকি অনশন এ কর্মসূচি পালন করেন। এদিন সকালে ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, দৌলতপুর, খালিশপুর, দিঘলিয়া, আলীম, ইস্টার্ন, কার্পেটিং ও জেজেআই জুটমিলের শ্রমিকরা নিজ নিজ কর্মস্থলে না গিয়ে স্ব-স্ব মিল গেটে সমবেত হন। সেখানে শ্রমিকরা পৃথক পৃথকভাবে মূল ফটকের সামনে অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেন। কর্মসূচি চলাকালে মিল গেটগুলোতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম: জেলার সীতাকু-, বায়োজিদ, পতেঙ্গা পাহাড়তলী সাগরিকা শিল্প এলাকায় গত ২৫ নভেম্বর পৃথক মিছিল বের করে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন পাটকলের শ্রমিকরা। এ ছাড়া নগরীর আমিন জুট মিলের শ্রমিকরা চট্টগ্রাম-হাটহাজারী মহাসড়কের জুট মিল গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি নিয়ে প্রধান প্রধান কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন আমিন জুট মিল শ্রমিক কর্মচারী পরিষদের সভাপতি আরিফুর রহমান, মো. মোস্তফা, শামসুল আলম, কামাল উদ্দিন। রাজশাহী: রাজশাহীর পাটকল শ্রমিকরা ২৫ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পাটকলের সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ এ বিক্ষোভের আয়োজন করে। এদিন বেলা ১১টার দিকে নগরীর কাটাখালি এলাকায় মিলগেটে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শ্রমিকরা। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন রাজশাহী পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জিল্লুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন। এ সময় সংগঠনটির সহ-সভাপতি আব্দুল আলীম ও কোষাধ্যক্ষ মোস্তাক হোসেনসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। শ্রমিক নেতারা বলেন, গত ১২ সপ্তাহ থেকে শ্রমিকদের বেতন বন্ধ। ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫৫০ জন অবসরে গেলেও গ্র্যাচুইটি পাননি। জাতীয় মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) সিদ্ধান্ত বাতিল, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ গ্রাচ্যুইটির টাকাসহ ১১ দফা দাবি বাস্তবায়ন চান শ্রমিকরা।