অভিযানেও থামছে না প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া আহরণ

Posted: 10 ফেব্রুয়ারী, 2019

খুলনা সংবাদদাতা : প্রজনন মৌসুম বিবেচনায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই মাস সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। এ সময়ে যাতে কেউ কাঁকড়া ধরতে না পারে সে জন্য চলছে প্রশাসনের অভিযান ও নজরদারি। তবে কোনোভাবেই অসাধু জেলে ও মহাজনদের থামানো যাচ্ছে না। এরই মধ্যে গত এক মাসে আহরণকৃত ৮০০ কেজি কাঁকড়া জব্দ করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে অন্তত ১০ জেলেকে। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ দুই মাস মা কাঁকড়ার ডিম থেকে প্রচুর পরিমাণে ছোট কাঁকড়া জন্ম নেয়। ফলে এ সময়ে সুন্দরবনের জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা সব ধরনের কাঁকড়া আহরণ, মজুদ, বিক্রি ও পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া আহরণ বন্ধ করা না গেলে হুমকির মুখে পড়বে দেশের এ প্রাকৃতিক সম্পদ। দেখা যাচ্ছে, প্রশাসনের নজরদারির ফাঁক গলে অনেকেই অবৈধভাবে কাঁকড়া ধরছেন। বিশেষ করে সুন্দরবনসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার জেলে ও মহাজনরা এ অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছু ব্যবসায়ী ঘেরের কাঁকড়া বলে মৎস্য বিভাগের অনুমতি নিয়েই বন থেকে সংগৃহীত কাঁকড়া বিক্রি করছেন। ফলে এ সম্পদ রক্ষায় বন বিভাগ ও প্রশাসনকে আরো কৌশলী ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। শুধু এ বছরই নয়, প্রায় প্রতি বছরই এ সময়ে কাঁকড়া সংরক্ষণে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় সংশ্লিষ্টদের। এবার প্রজনন মৌসুমের শুরু থেকে গত এক মাসে বিভিন্ন স্থানে পৃথক অভিযান পরিচালনা করেছে বন বিভাগ, মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও পুলিশ। এ সময় অবৈধভাবে আহরিত প্রায় ৮০০ কেজি কাঁকড়া জব্দ করে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে ছেড়ে দেয়া হয়। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁকড়া নদী বা খালে বেড়ে উঠলেও এর প্রজনন হয় সাগরের মোহনায়। তাই এ সময় কাঁকড়াগুলো ডিম দেয়ার জন্য সাগরের দিকে ছোটে। আর ডিমওয়ালা কাঁকড়া ধরা বেশ সহজ হওয়ায় অসাধু জেলেরা এর সুযোগ নেয়। ফলে অন্য সময়ের থেকে প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া সব থেকে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। বনসংলগ্ন উত্তর রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা কাঁকড়া ব্যবসায়ী জেলে মোতালেব হাওলাদার বলেন, সুন্দরবন থেকে চোরাইপথে কাঁকড়া আহরণ করা হচ্ছে। তিনি নিজেও স্থানীয় আড়তগুলো থেকে এসব কাঁকড়া কিনছেন। যা পরে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ২০০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এ বিষয়ে কথা হলে শরণখোলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া আহরণ পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলে এ সম্পদ রক্ষা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। আর এজন্য সবার সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করাও জরুরি হয়ে পড়েছে। পূর্ব সুন্দরবনের সহকারী বন সংরক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন জানান, অসাধু জেলেরা প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া আহরণ করছেন। তবে আগের তুলনায় এর পরিমাণ কমেছে। যারা নিষেধাজ্ঞা মানছে না তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। বন বিভাগ এ ধরনের জেলে ও মহাজনদের বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছে।