তদন্ত শেষ ৫ বছর আগে, তবু জামায়াতের বিচার নেই

Posted: 06 জানুয়ারী, 2019

একতা প্রতিবেদক : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় তদন্ত কাজ পাঁচ বছর আগেই সম্পন্ন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তবে কী কারণে বিচার কাজ এগুচ্ছে না তা প্রসিকিউশনই ভালো জানে বলেও মন্তব্য করেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। গত ১ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমণ্ডিতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হান্নান খান। যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার প্রসঙ্গে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা ২০১৪ সালে (তদন্ত প্রতিবেদন) দিয়েছি। এরপর ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ সাল পার হয়ে গেছে। চার বছরের এই কালক্ষেপণ উচিত ছিল না। আর এটি এমন একটি বিষয় আমি মনে করি, যেখানে সংবিধানের রিফ্লেকশন আছে। অলরেডি সিইসি কাজ করে দিয়েছেন, দলটির নিবন্ধন বন্ধ করে দিয়েছেন। সেখানে দল হিসেবে (নিষিদ্ধ) করার বিষয়ে কোথায় বাধা রয়েছে। কিন্তু কেন এটা হচ্ছে না, এটা আমি নিজেও বুঝি না।’ হান্নান খান বলেন, আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, এর ফয়সালাটা হওয়া উচিৎ। অলরেডি জামায়াতের নিবন্ধন নেই। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, পর্যবেক্ষণ এসেছে। জাজমেন্টে এসেছে জামায়াত ক্রিমিনাল অরগাইজেশন। এটার সুরাহা হওয়া উচিৎ বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। সিইসি অলরেডি কাজ করে দিয়েছেন নিবন্ধন বাতিল করে দিয়ে। তাহলে দল হিসেবে বিচার করার জন্য বাধাটা কোথায় আছে? আমরা সকলেই চাই। কিন্তু কেন এটা হচ্ছে না আমার জানা নেই। তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিবসহ ২৫ জনের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতের নিবন্ধন (রেজিস্ট্রশন) অবৈধ ও কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদসস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ ২০১৩ সালের ১ আগস্ট এ রায় দেন। এর আগে একাধিকবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হয়। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়। উচ্চ আদালতের এ রায়ের পর নির্বাচন কমিশন যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দলটির নিবন্ধন বাতিল ও নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে। এরপর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিলেও জাতীয় নির্বাচনে দলটি আর অংশ নিতে পারেনি। তবে ওই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে জামায়াত। গত পাঁচ বছর চলে গেলেও সেই আপিলের শুনানি শুরুর উদ্যোগ আজও নেওয়া হয়নি। হবিগঞ্জের দুজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মধু মিয়া তালুকদারসহ দুজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। মধু মিয়া গ্রেপ্তার থাকলেও অন্যজন পলাতক রয়েছেন। তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক বলেন, মধু মিয়া এবং তার বংশের লোকজন মুসলিম লীগের সমর্থক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি বানিয়াচং থানাধীন মুরাদপুর ইউনিয়নে শান্তি কমিটি ও ‘মধু বাহিনী’ নামে একটি রাজাকার দল গঠন করেন তবে সাক্ষীদের জবানবন্দিতে জানা গেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মধু পলাতক ছিলেন। ১৯৭৬ সালে তিনি গ্রামে ফিরে বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ২০১৬ সালে বানিয়াচং থানার মুরাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি ওই ইউনিয়নে বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে আছেন। এ দিকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে গণমাধ্যমে যে অভিযোগ এসেছে, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে, তবে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও জানানো হয়।