বিলুপ্তির পথে হালদার বিপন্ন ডলফিন

Posted: 11 ফেব্রুয়ারী, 2018

একতা পরিবেশ ডেস্ক : স্থানীয়ভাবে উতোম বা শুশুক নামে পরিচিত দেশীয় ডলফিনকে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) অতি বিপন্ন হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। মিঠাপানির এই ডলফিনের এক বড় বিচরণ ক্ষেত্র হালদা নদী। প্রাকৃতিক জলজ প্রাণীর উৎস ও গুরুত্ব বিচারে ২০১০ সালে এই নদীর প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হলেও নিয়মিত বিরতীতেই এই নদীতে মরে ভেসে উঠছে বিপন্ন ঘোষিত ডলফিন। সর্বশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি হালদা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি মৃত ডলফিন। এ নিয়ে গত এক মাসে নদীটি থেকে মৃত উদ্ধার করা চতুর্থ ডলফিন এটি। আর গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে হিসাব ধরলে ১৫টিরও বেশি ডলফিন মারা গেছে হালদায়। অথচ এ নদীতে সাকুল্যে ডলফিন আছে মাত্র দেড়শটি। কথা হচ্ছে জলজ প্রাণীর জন্য অভয়ারণ্য ঘোষণার আট বছর পরও কেন এই নদীতে বিপন্ন ঘোষিত একটি প্রজাতি মারা পড়ছে। অভয়ারণ্য ঘোষণার অর্থ তাহলে কী? এই অভয়ারণ্য আসলে কার জন্য? এই দেশে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অর্থ তো অজানা নয়। হালদায় গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত মারা পড়া ডলফিনগুলোর প্রতিটির শরীরেই পাওয়া গেছে ক্ষতচিহ্ন। কোনো না কোনো ধারালো বস্তুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে এই ঘটনা ঘটেছে। হালদা সংলগ্ন এলাকার মানুষেরা এই ডলফিন মৃত্যুর জন্য ড্রেজার দিয়ে হালদা থেকে বালু তোলা এবং সেই বালু ইঞ্জিনচালিত নৌযানে পরিবহন করাকে দায়ী করছেন। তাদের মতে, নদীতে চলাচলকারী বালুবাহী নৌযান ও ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রপেলারের আঘাতে এসব ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। মিঠাপানির স্তন্যপায়ী এই ডলফিন গাঙ্গেয় ডলফিন নামেও পরচিতি। সাধারণত দূষণমুক্ত পরিষ্কার পানিতে এটি বিচরণ করে। এই ডলফিন অন্য জলজ প্রাণীর মতো নয়। অনেক বেশি সংবেদনশীল এটি। ফলে দূষণ, সে শব্দ কিংবা পানি যেখানেই হোক, তা এই ডলফিনের বিচরণ ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে। ঝুঁকিতে ফেলে এর খাদ্য গ্রহণ, প্রজনন থেকে শুরু করে স্বাভাবিক সব প্রক্রিয়াকে। এই ডলফিনের মতো এই অঞ্চলে রয়েছে অনেক মূল্যবান জলজ প্রাণী। বিশেষ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হওয়ায় হালদার গুরুত্ব আমাদের অর্থনীতিতেও অনেক বেশি। এই সব প্রেক্ষাপটেই হালদার একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু তা নগদ অর্থের হিসাবে গণনাযোগ্য বিধায় ইলিশ মৌসুম ব্যতীত খুব একটা স্মরণে থাকে না কর্তাব্যক্তিদের। ফলে আইইউসিএন ঘোষিত বিপন্ন এই ডলফিনের প্রজাতিটি রক্ষায় গালভরা কথা বলা হলেও আদতে তেমন উদ্যোগ নেই। হ্যাঁ প্রতিটি মৃত্যুর পর একটি ময়নাতদন্ত অবশ্য হয়। কিন্তু গত কয়েকটি ময়নাতদন্তে ওই একই কারণ, অর্থাৎ প্রপেলারের আঘাতে ডলফিন মৃত্যুর কথা উঠে এলেও তা বন্ধে কার্যত কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। কাগজে কলমে হালদা থেকে বালু তোলা ও তা বহনে ইঞ্জিনচালিত নৌযান ব্যবহার করায় বিধি-নিষেধ রয়েছে। কিন্তু তা কেউ মানছে না। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ড্রেজার দিয়ে হালদা থেকে বালু তোলা ও সেই বালু ইঞ্জিনচালিত নৌযানে পরিবহন করা হচ্ছে। আর এতে ডলফিনের বিচরণ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে। কিন্তু প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করছে।