বাসদ’র সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের মতবিনিময়

Posted: 08 অক্টোবর, 2017

একতা প্রতিবেদক : নির্বাচন, নির্বাচনী ব্যবস্থা, ভোটাধিকারসহ নানা প্রশ্নে বহুদিন থেকে চলে আসা চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানকল্পে গত ৫ অক্টোবর সকালে নির্বাচন কমিশনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে বাসদ-এর ১৪ সদস্যের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্যে কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা, তার স্বচ্ছতা, গ্রহণযোগ্যতা, শুধু নির্বাচন কমিশনের একক কর্মপ্রচেষ্টার উপর নির্ভর করেনা। যদিও নির্বাচনের সফলতা ব্যর্থতার দায়-দায়িত্বের সিংহভাগ নির্বাচন কমিশনকেই বহন করতে হয়। যে কারণে নির্বাচনের জন্য কমিশনকে মুখ্য ভূমিকায় রেখে ক্ষমতাসীন দল-জোট, ক্ষমতাপ্রত্যাশী প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল-জোটসহ অংশগ্রহণকারী ও প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী দলসমূহ, বিচার ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, সিভিল প্রশাসন, দুর্নীতিদমন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহের একযোগে সমন্বিত উদ্যোগে ক্রিয়াশীল হয়েই কেবলমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব। কিন্তু সার্বিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির অভাব ও প্রতিষ্ঠানসমূহের দলীয়করণকৃত কিংবা ভঙ্গুর দশা এবং ক্ষমতার মালিক যে জনগণ তাদের আস্থা, উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ব্যাপক গণউদ্যোগের ঘাটতিতে সব আয়োজন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তাতে শাসন ক্ষমতার অনুমোদন হয়তো প্রদর্শিত হয় কিন্তু জনগণের প্রকৃত ক্ষমতায়ন হয়না। ফলে নির্বাচন তখন শাসক শ্রেণি ও দলের স্বেচ্ছাচারের পথ উন্মুক্ত ও প্রসারিত করে। গণতান্ত্রিক শাসনের জন্য নির্বাচন অপরিহার্য কিন্তু নির্বাচন হলেই গণতন্ত্র হয় না তার দৃষ্টান্ত হিটলারের জার্মানি, মুসোলিনির ইটালিসহ ইতিহাসে ভুরি ভুরি রয়েছে। আমাদের দেশের ইতিহাসও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রথমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বাসদের নেতৃবৃন্দকে শেরে বাংলানগরস্থ কমিশন ভবনে স্বাগত জানিয়ে কমিশনের সচিব ও কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান প্রতিনিধি দলের সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ, জাহেদুল হক মিলু, রাজেকুজ্জামান রতন, কেন্দ্রীয় সংগঠক নিখিল দাস, রওশনা আরা রুশো, ওসমান আলী, অধ্যক্ষ ওয়াজেদ পারভেজ, জয়নাল আবেদীন মুকুল, আব্দুর রাজ্জাক, জুলফিকার আলী, খালেকুজ্জামান লিপন, জনার্দ্দন দত্ত নান্টু ও প্রকৌশলী শম্পা বসুকে নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে দলের পক্ষ থেকে ১৩ দফা লিখিত বক্তব্য ও প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবে প্রধানত কালোটাকা, পেশিশক্তি ও সাম্প্রদায়িকতার প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সকলের অংশগ্রহণে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে তোলা, দুর্নীতিবাজ আমলা-পুলিশদের নির্বাচনী দায়িত্ব না দেয়া, প্রার্থীর জামানত পাঁচ হাজার টাকা ও নির্বাচনী ব্যয় দশ লাখ টাকা, নির্বাচনী অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি করা, প্রার্থীদের প্রচার ও পরিচিতি সভার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নেয়ার কথা বলা হয়। বিদেশে টাকা পাচারকারী, আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের মালিকদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার দাবি জানানো হয়। নির্বাচন কমিশনের নেতৃবৃন্দ বাসদ এর উত্থাপিত প্রস্তাবনা ও বক্তব্য মনযোগ সহকারে শুনেন এবং কিছু সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য সাধ্যানুযায়ী উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন। মতবিনিময় শেষে খালেকুজ্জামান নির্বাচন কমিশন ভবনে বাসদ এর প্রতিনিধি দলকে মতামত ও পরামর্শ প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জনানো ও ধৈর্য সহকারে বক্তব্য শুনার জন্য কমিশন নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।