রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে

Posted: 10 সেপ্টেম্বর, 2017

একতা প্রতিবেদক : মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নিপীড়ন, হত্যা, হামলা, অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলা শাখা গত ৩০ আগস্ট এক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, মিয়ানমারে একটি বিষফোঁড়ার জন্ম দিতে চায় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো দেশবিরোধী, সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য নানাভাবে উসকানি দেয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের উপর নির্বিচার গণহত্যা বন্ধ করে তাদের বাসভূমিতে বসবাস করার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি এবং অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সমাবেশে তারা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই অপশক্তি বাংলাদেশেরও ক্ষতি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার অভিপ্রায়ে এই অপশক্তি পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুকে পুঁজি করে সংকট তীব্র করছে। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থেই মিয়ানমারে বিদ্যমান গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সকল শান্তিকামী মানুষকে সোচ্চার হতে হবে। কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অশোক সাহা’র সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক কানাই দাশ, ফরিদুল ইসলাম, জেলা সদস্য রাহাত উল্লাহ জাহিদ, শিহাব উদ্দিন সাইকু, অনুপম বড়ুয়া পারু, নাহিদ আল মোস্তাফা প্রমুখ। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, রোহিঙ্গারা একটি পৃথক জাতিসত্ত্বা। মিয়ানমার তাদের মাতৃভূমি। নিজেদের মাতৃভূমিতে রোহিঙ্গারা হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসছে। রাষ্ট্রশক্তির কোনো অধিকার নেই, একটি জাতিসত্ত্বাকে গায়ের জোরে নিষ্পেষিত করা এবং বিলুপ্ত করার। মানবসভ্যতার ইতিহাসে কোনো জাতিসত্ত্বাকে জবরদস্তিমূলকভাবে নিশ্চিহ্ন কেউ করতে পারেনি। পৃথিবীর ইতিহাস তা বলে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা তার উজ্জ্বল প্রমাণ। নারায়ণগঞ্জে সিপিবি-বাসদ-বাম মোর্চার মানববন্ধন : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গণহারে হত্যার প্রতিবাদে সিপিবি, বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বাম মোর্চার সমন্বয়ক ধীমান সাহা জুয়েলের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, সিপিবি নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান টিপু, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা রফিকুল ইসলাম, সিপিবি নেতা বিমল কান্তি দাস, বাসদ নেতা এম, এ, মিল্টন। নেতৃবৃন্দ বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৪ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের গণহারে হত্যা করছে। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। প্রাণ বাঁচাতে তারা ছুটছে বাংলাদেশের দিকে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে এই অভিযান। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি না দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিক বলে ভিত্তিহীন অভিযোগ দিচ্ছে। জাতিসংঘ পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী হিসাবে রোহিঙ্গাদের অভিহিত করেছে। রোহিঙ্গারা সংখ্যায় ২২ লাখ হলেও অর্ধেক আছে আরাকানে, বাকী ১১ লাখ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উদ্বাস্তু হিসাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে। আরাকানে বহু শতাব্দী ধরে রোহিঙ্গা মুসলমান, রোহিঙ্গা হিন্দু আর মহাযানী বৌদ্ধদের মাতৃভূমি। মধ্যযুগে এই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বলা হতো চন্দ্র রোসাং আর মুসলমানদের রোহাং। রোহাং থেকে আজকের রোহিঙ্গা কথাটার জন্ম। হিন্দু চন্দ্র রাজারা এবং মুসলিম মুলতানরাই ছিলেন আঠারো শতকের আগ পর্যন্ত আরাকানের শাসক। আরাকানী রাজসভায় মধ্যযুগের কবি আলাওল, সৈয়দ শাহ সগীর প্রমুখ বাঙালী কবিরা ছিলেন। সুতরাং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রাখাইন রাজ্যের বাইরের কোনো জনগোষ্ঠী নয়। তাই বার্মার সরকারকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নাগরিকত্ব দিয়ে সেদেশের জনগণের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধ ও মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে বাংলাদেশ সরকারকে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি এবং জাতিসংঘের সক্রিয় ভূমিকার প্রত্যাশা করেন।