বন্দর বিদেশিদের কাছে ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্কপের প্রতিবাদ

Posted: 12 অক্টোবর, 2025

একতা প্রতিবেদক : শ্রম আইনের চলমান সংশোধনীতে শ্রমিক পক্ষের প্রস্তাবের যথাযথ প্রতিফলন নিশ্চিত করা, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ-স্কপ। স্কপের বক্তব্য তুলে ধরতে গত ৭ অক্টোবর সকাল ১১ টায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের ৩য় তলায় মাওলানা আকরাম খাঁ হলে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বানে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের হাওলাদারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুগ্ম সমন্বয়ক আহসান হাবিব বুলবুল। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবং সাংবাদিক বন্ধুদের প্রশ্নের উত্তর দেন স্কপ নেতা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, রাজেকুজ্জামান রতন, চৌধুরী আশিকুল আলম, সাইফুজ্জামান বাদশা, শামিম আরা, মাহবুব আলম, বাদল খান, সাকিল আক্তার চৌধুরী, নুর মোহাম্মদ আকন্দ, শহিদুল্লাহ বাদল, ফয়েজ হোসেন, চট্টগ্রাম স্কপের সমন্বয়ক নুরুল্লা বাহার প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ বক্তব্যে বলেন, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে স্থায়ী মজুরি কমিশন গঠন, শ্রম আইনের অগণতান্ত্রিক ধারা বাতিল করে আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ এর আলোকে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন, ইপিজেডসহ সকল প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের জন্য একই আইন, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও নিরাপদ কর্ম পরিবেশ, কর্মক্ষেত্রে নিহত হলে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ, আহতদের ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা, পুনর্বাসন, সুলভমুল্যে শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা, শ্রমিকদের আবাসন, চিকিৎসা, পেনশনের দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন দীর্ঘদিনের। শ্রম আইন ২০০৬ এর অগনতান্ত্রিক ধারাসমুহ বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়নের লক্ষে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ সুপারিশ প্রদান করেছিল। এই সুপারিশের মধ্য থেকে ১০১ টি ধারা নিয়ে আলোচনা করে শ্রম আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু আমরা দেখলাম অন্যান্য বিষয় বাদ রেখে শুধুমাত্র ট্রেড ইউনিয়ন গঠন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা কেন্দ্রীভূত হয়। আমরা সেক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তাব শ্রম মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিলাম। আমাদের পূর্বের প্রস্তাব ছিল ২০ জন সদস্য নিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে এই বিধান প্রবর্তন করা। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সদস্য সংখ্যার ধাপ নির্ধারণ করে প্রস্তাব দেয়ার কারণে আমরা আমাদের প্রস্তাব নতুন করে প্রদান করতে বাধ্য হয়েছি। ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শ্রমিক সংখ্যা বিষয়ে স্কপের প্রস্তাব- ক) যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক সংখ্যা ২১ থেকে ৫০ জন সেখানে ১০ জন শ্রমিক সদস্য হলে ইউনিয়ন গঠন করতে পারবে। খ) যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের সংখ্যা ৫১ থেকে ১০০ জন সেখানে ১৫ জন শ্রমিক মিলে ইউনিয়ন গঠন করতে পারবে। গ) যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক সংখ্যা ১০১ থেকে ২০০ জন সেখানে ২০ জন শ্রমিক মিলে ইউনিয়ন গঠন করতে পারবে। ঘ) যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক সংখ্যা ২০১ থেকে ৪০০ জন সেখানে ৩০ জন শ্রমিক শ্রমিক মিলে ইউনিয়ন গঠন করতে পারবে। ঙ) যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক সংখ্যা ৪০১ থেকে ৫০০ জন, সেখানে ৪০ জন শ্রমিক মিলে ইউনিয়ন গঠন করতে পারবে। চ) শ্রমিক সংখ্যা ৫০১ থেকে ১০০০ জন হলে ইউনিয়ন সদস্য সংখ্যা ৫০ জন হতে হবে। ছ) শ্রমিক সংখ্যা ১০০১ থেকে ৩০০০ হলে ১০০ জন সদস্য নিয়ে ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। জ) শ্রমিক সংখ্যা ৩০০০ এর বেশি হলে ৩০০ জন সদস্য নিয়ে ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। সিবিএ প্রসঙ্গে স্কপের প্রস্তাব হচ্ছে- ক) কোন প্রতিষ্ঠানে একটি ইউনিয়ন থাকলে সেটিই সিবিএ হিসেবে শ্রমিকের পক্ষে দরকষাকষি করবে। খ) কোন প্রতিষ্ঠানে একাধিক ইউনিয়ন থাকলে সিবিএ নির্বাচন করতে হবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট প্রাপ্ত ইউনিয়ন সিবিএ হিসেবে দরকষাকষি করবে। নেতৃবৃন্দ, শ্রমিক পক্ষের উপরোক্ত প্রস্তাবনা গ্রহণপুর্বক সংশোধিত শ্রম আইনে আইএলও কনভেনশন ৮৭, ৯৮ এর প্রতিফলন নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাতীয় ন্যূনতম মজুরি, স্থাায়ী কাজে অস্থায়ী ধরণের নিয়োগ বন্ধ করে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া, দূর্ঘটনাজনিত ক্ষতিগ্রস্থতায় আইএলও কনভেনশন ১২১ মানদন্ডে ক্ষতিপূরণ, চাকরি এবং সামাজিক নিরাপত্তার সুরক্ষা, ইপিজেডসহ সকল প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের জন্য একই আইন এবং বিদ্যমান বৈষম্যমূলক বিধানসমূহের বিলোপ নিশ্চিত করার দাবি জানান। শ্রমিকদের এসব দাবি মানা না হলে- অন্যাথায় আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের পথে শ্রমিক কর্মচারীদের হাঁটতে হবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন নেতৃবৃন্দ। বক্তারা চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষার আন্দোলন বন্ধে পুলিশি হস্তক্ষেপের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।