নির্বাচন হবে? হলে কেমন?
Posted: 12 অক্টোবর, 2025
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে দেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বার বার এ কথাও বলছেন যে, তার সরকার যে নির্বাচনটি আয়োজন করবে, সেটি হবে দেশের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা।
শুধু ড. ইউনূস একা নন, তার সরকারের বিভিন্ন দিক থেকেই বার বার আসছে একই ধরনের কথা। তারপরও দেশের যে কোনো প্রান্তে যে কোনো শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে একটি প্রশ্ন অবধারিতভাবে ঘুরেফিরে আসে–নির্বাচন হবে তো?
সরকারপ্রধানের মুখ থেকে বার বার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা আসার পরও কেন সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন অনিশ্চয়তা? এর উত্তর একটাই হতে পারে, আস্থাহীনতা! সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করা হলেও মানুষ তাতে ভরসা পাচ্ছে না। কারণ, তারা নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূসকেই এই সরকারের শেষ কথা মনে করছে না। গত এক বছরের ঘটনাপ্রবাহ এবং সরকারের কর্মকাণ্ড থেকে মানুষের মধ্যে ধারণা হয়েছে, ড. ইউনূস এবং তার নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা পরিষদ দায়িত্বে থাকলেও এই একটি কেন্দ্র থেকে রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে না। এখানে প্রকাশ্য কিছু শক্তির যেমন প্রভাব রয়েছে, তেমনই অপ্রকাশ্য কিছু শক্তিও কলকাঠি নাড়ছে। ‘গুপ্ত’ রাজনৈতিক শক্তি এবং ‘মব’ বাহিনী রাষ্ট্রকাঠামোকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন ব্যবস্থা এখন অনেকাংশেই তাদের নিয়ন্ত্রণে। আবার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ আধিপত্যবাদী বিদেশি শক্তিও তাদের নানাভাবে মদদ দিচ্ছে। ফলে ড. ইউনূস চাইলেও তাদের মনমতো না হলে ঘোষিত সময়ে নির্বাচন হবে কি না, মানুষের মধ্যে দৃঢ়ভাবে সেই সংশয় রয়েছে।
এতো কিছুর পরও যদি ড. ইউনূসের ঘোষণা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হয়, তাহলে সেটি কেমন হবে? এই প্রশ্নটি এ কারণে সামনে আসছে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা মূলত নিয়ন্ত্রণ করে তিনটি উপাদান- টাকা, পেশীশক্তি আর প্রশাসনিক কারসাজি। আগেই বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচনী প্রশাসন অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করছে ‘গুপ্ত’ রাজনৈতিক শক্তি ও মব বাহিনী। টাকা ও প্রশাসনিক কারসাজির মাধ্যমে তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে কতোটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তা ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে স্পষ্ট হয়েছে। অনেকেই ধারণা করছেন, জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলকেও একইভাবে প্রভাবিত করা হতে পারে। আবার ফলাফল নিজেদের অনুকূলে নেওয়ার নিশ্চয়তা না পেলে এই শক্তিগুলো ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও অনেকের আশঙ্কা।
দেশে চলমান সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একটাই পথ, দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। যে কোনো ধরনের সংশয় ও ষড়যন্ত্র কাটিয়ে ঘোষিত সময়ের মধ্যে টাকার খেলা, পেশীশক্তির দাপট ও প্রশাসনিক কারসাজি ও মৌলবাদী আস্ফালনমুক্ত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে–সেটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।