বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের অঙ্গীকার

Posted: 12 অক্টোবর, 2025

একতা প্রতিবেদক : কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদের দেখিয়ে যাওয়া সংগ্রামের পথ ধরে বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন সিপিবি সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন। তিনি বলেন, একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার সংগ্রামে কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ তাঁর গোটা জীবন ব্যয় করেছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান পর্বে স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম, মহান ভাষা আন্দোলন, ’৫৮-র সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-র গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর দেখানো সেই সংগ্রামের পথ ধরেই সিপিবি অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গত ৯ অক্টোবর বিকেল ৫টায় পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনে সিপিবির উদ্যোগে স্মরণসভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সিপিবির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দনের সভাপতিত্বে ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জলি তালুকদারের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন, সিপিবির সাবেক সভাপতি ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হেসেন প্রিন্স, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. দিবালোক সিংহ প্রমুখ। স্মরণসভায় মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশের যেকোনো সংকটে মোহাম্মদ ফরহাদ প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন। তার জীবদ্দশায় সংবিধান, রাজনীতি ইত্যাদি নিয়ে সৃষ্টি হওয়া যে কোন জটিল পরিস্থিতিতে তিনি পথ দেখাতে পারতেন। কমরেড সেলিম আরো বলেন, বাংলাদেশ আজ এক বিপদজনক যুগসন্ধিক্ষণ অতিক্রম করছে। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা অনুসারে রাষ্ট্রীয় সংস্কার করা আপামর মানুষের দাবি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, সংস্কার কোথায়? তিনি বলেন, যে সব বিষয়ে সবাই একমত, সে সব সংস্কার কাজ বহু আগে শুরু করা যেত। কিন্তু কোন অজানা কারণে, মত ভিন্নতা থাকা সাংবিধানিক বিষয়াবলী নিয়েই সরকারের যত তোরজোর। তিনি আরো বলেন, সাংবিধানিক বিষয়াবলী নিয়ে গণভোট শুধু অপ্রয়োজনীয় তাই নয়, এর তেমন কোন আইনগত গুরুত্ব নেই। যে সকল বিষয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়নি, সে সকল বিষয়ে জনমত যাচাইয়ের এখতিয়ার সরকারের নেই। তিনি বলেন, যথা সময়ে অবাধ-নিরপেক্ষ-সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন করা সরকারের দায়িত্ব। সাংবিধানিক বিষয়গুলো সুরাহার দায়িত্ব নির্বাচিত সংসদের। স্মরণসভায় ফওজিয়া মোসলেম বলেন, তুলনামূলক কম বয়সী হওয়া সত্ত্বেও মহান মুক্তিযুদ্ধে কমরেড ফরহাদ জাতীয় পর্যায়ের নেতা হিসেবে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি কমিউনিস্ট পার্টি-ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ গেরিলা বাহিনীর অন্যতম প্রধান সংগঠক ছিলেন। গেরিলা বাহিনী সংগঠিত করা ও তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাই শুধু নয়, সে সময়ের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অস্ত্র জোগাড়ের মতো অত্যন্ত জটিল কাজ সম্ভব করেছিলেন কমরেড ফরহাদ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল, যার নেপথ্যে ছিলেন কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ। স্মরণসভায় রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা মুক্তিযুদ্ধের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। বরং সাম্প্রদায়িকতা, নারীবিদ্বেষ, ভিন্নমত দমন ইত্যাদি গণবিরোধী কাজের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রকে ক্রমাগত প্রতিক্রিয়াশীল ভাবধারায় পরিচালনা করেছে। আজকে এমনকি মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধানের মূলভিত্তিকেও আক্রমণ করা হচ্ছে। এই সময়ে কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ আমাদের লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা। স্মরণসভায় ডা. দিবালোক সিংহ বলেন, কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ স্বপ্ন দেখতেন এমন একটি সমাজের যেখানে নারী-পুরুষ, ধর্ম-সম্প্রদায়, জাতি-পরিচয় নির্বিশেষে সকল মানুষের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। কমরেড ফরহাদ সেই সমাজের জন্য আমৃত্যু লড়াই করেছেন। নতুন প্রজন্মকে সে সংগ্রাম অব্যাহত রাখার দায়িত্ব নিতে হবে।