‘ক্ষমতায় থাকতে হাসিনা রাষ্ট্র সরকার এক করে ফেলছে’

Posted: 07 মার্চ, 2021

একতা প্রতিবেদক : আটককৃত ছাত্র নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে ৫ মার্চ প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ কাফী রতন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল কাদের, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি জিয়া হায়দার ডিপটি, ছাত্রনেতা সাখাওয়াত ফাহাদ, মমতা চক্রবর্তী। সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সম্পাদক জলি তালুকদার। সভাপতির বক্তব্যে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। যেখানে আমরা এই সমাবেশ আয়োজন করেছি সেখানে ১৯৭৩ সালে পুলিশ গুলি করে ছাত্র ইউনিয়নের মতিউল ও কাদেরকে হত্যা করেছিল। তখন আমি বলেছিলাম, যার হাত সন্তানের রক্তে রঞ্জিত তাকে জাতির পিতা আমরা মানি না। এইটা কোন রাষ্ট্রবিরোধী কথা ছিল না, এইটা ছিল সরকারের সমালোচনা। আজকে ক্ষমতায় থাকার জন্য শেখ হাসিনা রাষ্ট্র, সরকার সব এক করে ফেলেছেন। লুটপাটের জন্যে গদি রক্ষা করতে হবে। গদি রক্ষা করতেই এই ধরণের নিবর্তনমূলক আইন জারি রাখা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘লেখক, কার্টুনিস্ট, সাংবাদিক, ছাত্রদের আজকে ডিজিটাল আইনে গ্রেপ্তার করে জেলে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। সরকার সুপরিকল্পিতভাবে বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাতের অন্ধকারে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেশ আজকে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে, একদিকে ১ শতাংশ লুটেরা ধনিক শ্রেণি অন্যদিকে ৯৯ শতাংশ শ্রমিক, মেহনতি মানুষ। সরাসরি লড়াই চলছে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি মেহনতি জনতার সাথে ঐ লুটপাটকারিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সম্মুখভাগে থাকবে। আজকে তারা অন্যায় করে পার পেয়ে যাচ্ছে কিন্তু জনতার ক্ষমতা যেদিন নিশ্চিত হবে সেদিন সকল অন্যায়ের বিচার জনতার আদালতে হবে।’ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, ‘অদ্ভুত উটের পিঠে দেশ চলছে। শিকদার গ্রুপের মালিকসহ অসংখ্য খুনের আসামীরা জামিনে মুক্তি পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ এই ছাত্ররা যারা লেখক হত্যার বিচার চেয়ে শান্তিপূর্ণ মশাল মিছিল করেছে তাদের জামিন হচ্ছে না। পৃথিবীতে কোন স্বৈরাচার এইভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে নাই। দেশের ছাত্র শ্রমিক জনতা একত্র হয়ে জেলায় জেলায় আন্দোলনে জড়ো হচ্ছে।’ প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, ‘২০০৬ সাল থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি আইনকে ধীরে ধীরে কুখ্যাত আজকের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পরিণত করা হয়েছে। যে ৫৭ ধারা মানুষের বাকস্বাধীনতা স্তব্ধ করে দিয়েছিল, যে আইনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন, জনমত তৈরি হয়েছিল, বাতিলের দাবি উঠেছিল সেই ৫৭ ধারারই নতুন সংস্করণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। সরকার ও রাষ্ট্র এক বিষয় না। সরকারের সমালোচনা জনগণের অধিকার, এই অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না।’ ঢাকা কমিটির সাবেক সভাপতি শ্রমিকনেতা আবদুল কাদের বলেন, ‘সরকার সাধারণ ছাত্রদের উপর গ্রেপ্তার, নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। নিবর্তনমূলক আইন করে কথা বলার অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। এই ধরণের আইন বাতিল করে গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।‘ তিনি আরো বলেন, ‘নির্যাতন নিপীড়ন করে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।’ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা সাখাওয়াত ফাহাদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র ও সাধারণ জনগণের অধিকারের কথা বললে শোকজ, বহিষ্কারের শিকার হতে হচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশ ছাত্র জনতার মৌলিক অধিকারসমূহের আন্দোলনে হামলা, মামলা, গ্রেফতার করছে। ছাত্রদের এমন মামলা দিয়ে দমিয়ে রাখা যাবে না। আইয়ুব খান পারে নাই, এরশাদ পারে নাই, শেখ হাসিনাও পারবে না। যতো আঘাত আসবে ততো মানুষ দ্বিগুণ হয়ে আরো তীব্র আন্দোলনের সূচনা করবে।’ আটককৃত ছাত্র ইউনিয়ন নেতা তামজীদ হায়দার চঞ্চলের বাবা নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি জিয়াউল হায়দার বলেন, ‘দেশ আজ স্বৈরাচারের যাতাকলে নিষ্পেষিত। স্বাধীনতার পর থেকেই নানান কালাকানুন করে বিভিন্ন দল জনগণকে শোষণ করেছে। আওম অর্থ জনতা কিন্তু আওয়ামী লীগ কি আজকে জনতার দলের ভূমিকা পালন করেছে?? ১৯৮৮ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করে জেলে গিয়েছিলাম, ঠিক ৩৩ বছর পর আমার ছেলে একই তারিখে জেলে গেল।’ কারাগারে আটককৃত জয়তী চক্রবর্তীর মা মমতা চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রথমেই আমি আমার মেয়েসহ সবার মুক্তি চাই। এইটা কি পুলিশের দেশ?? নাকি জনগণের দেশ?? প্রধানমন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যদি তিনি স্বৈরাচার হন তবে এরশাদের মতো ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দেন অন্যথায় মানুষকে কথা বলার জন্য গ্রেপ্তার করা যাবে না। এইদেশের ছাত্রদের আন্দোলনের গৌরবময় আন্দোলনের ইতিহাস সবাই জানেন। এরা আমাদেরই সন্তান, এরা কেন অন্যায়কে মেনে নিবে?? পুলিশ ভাইদের বলছি, আপনাদের সন্তানরাও বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন করছে। একদিন আপনার সন্তানকেও গ্রেপ্তার করে জেলে ভরতে হবে। মাথা বিক্রি করে দিবেন না।’ সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।