রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সবাইকে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন প্রদানের দাবি

Posted: 24 জানুয়ারী, 2021

একতা প্রতিবেদক : করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করে দেশের সকল নাগরিককে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন প্রদান, একাধিক দেশ থেকে ভ্যাকসিন আমদানি করা ও এলপি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর উদ্যোগে গত ১৬ জানুয়ারি সকাল সাড়ে এগারটায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ। বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, বাসদ ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য সচিব জুলফিকার আলী, সদস্য খালেকুজ্জামান লিপন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, করোনা মহামারিতে দেশের মানুষের অর্থনীতি ও জীবন যখন বিপর্যস্ত, সেই সময় সরকারের প্রশ্রয়ে একদল মুনাফালোভী দুর্বৃত্ত মাস্ক, পিপিই, করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে দেশে নৈরাজ্য ও জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করেছিল। এই দুর্নীতিবাজ লুটপাটকারীদের হাত থেকে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রক্ষার জন্য দেশবাসী লড়াই করছে। এখন নতুন করে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। ২ ডলার মূল্যের অক্সফোর্ডের টিকা সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৩ ডলার দিয়ে কিনে তা ৫ ডলারে সরকারকে সরবরাহ করবে সরকারের উপদেষ্টা সালমান রহমানের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো। এর মাধ্যমে কোনো টেন্ডার ছাড়াই বেক্সিমকোকে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য ৬ কোটি ডলার বা ৫০০ কোটি টাকা মুনাফা করার সুযোগ করে দিল সরকার। এছাড়াও তারা বেসরকারিভাবে আমদানির অনুমতিও সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছে। যা ১৩ ডলারে বিক্রি করে মুনাফা লুটবে। অথচ মাত্র ১০ হাজার কোটি বরাদ্দ করলে গবেষণার মাধ্যমে নিজেদের দেশে টিকা তৈরি অথবা সরাসরি অক্সফোর্ডের টিকা সরকারি উদ্যোগে এনে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে প্রদান করা সম্ভব ছিল। নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্বের প্রায় ৬০টি প্রতিষ্ঠান করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে। ১২টি দেশে অনুমোদনের পরেও একাধিক দেশ থেকে ভ্যাকসিন না এনে শুধুমাত্র ভারতের সেরাম ইনসটিটিউট থেকে ভ্যাকসিন আমদানির উদ্যোগ নেয়ায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, এতে দেশের নাগরিকদের ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নেতৃবৃন্দ শুধু ভারতের উপর নির্ভরশীল না থেকে একাধিক দেশ থেকে ভ্যাকসিন আমদানির উদ্যোগ নেয়ার জোর দাবি জানান। বক্তাগণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে রাষ্ট্র ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করতে পারে এবং করোনাকালে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারে, ভ্যাকসিনের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের সক্ষমতা সেই রাষ্ট্রের আছে। কিন্তু সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র কতিপয় ব্যবসায়ীদের মুনাফার স্বার্থে ভ্যাকসিন আমদানি ও বিপননের দায়িত্ব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। এর ফলে ভ্যাকসিন নিয়ে বাণিজ্য ও মুনাফা যেমন বাড়বে তেমনই দলীয়করণ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বাড়বে। দেশের মানুষ যখন বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন প্রদান, পরীক্ষা ও চিকিৎসার দাবি করছে। তখন সরকার নীতি নিয়েছে ‘টাকা যার টিকা তার’ ও ‘টাকা যার চিকিৎসা তার’। যা একমাত্র গণপ্রতিনিধিত্বহীন সরকারই করতে পারে। নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনায় যখন দেশের প্রায় ৭০% মানুষের আয় কমেছে, প্রায় ১১ কোটি মানুষ চরম অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে, অসংখ্য মানুষ কর্মহীন বেকার হয়ে পড়েছে, তখন একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ দিশেহারা অন্যদিকে গণশুনানীর নামে গণ নাটক মঞ্চস্থ করে বিইআরসি এলপি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির চক্রান্ত করছে। এতে দেশের মানুষ আরও সংকটের মধ্যে নিপতিত হবে। সরকারি এলপিজি কোম্পানি সাড়ে ১২ কেজি গ্যাসের সিলিন্ডার ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকার প্রস্তাব করলেও সরকার তাকে ৯০২ টাকা ও ১২ কেজি বেসরকারি গ্যাসের সিলিন্ডার ৮০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। এর মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠান এলপিজি লিমিটেডকে ধ্বংস করে বেসরকারি ব্যবসায়ীদের মুনাফার দুয়ার উন্মোচিত করা হবে। বক্তাগণ সরকারি উদ্যোগে বেসরকারি মুনাফালোভী গোষ্ঠীর স্বার্থে এলপি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির তৎপরতা বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। একই সাথে মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা রুখে দাঁড়ানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। বক্তাগণ করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বাণিজ্য বন্ধ, দেশের সকল নাগরিককে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন প্রদানের ও একাধিক দেশ থেকে ভ্যাকসিন আমদানির দাবি জানান এবং দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভ্যাকসিন বাণিজ্য ও এলপি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্যও সকল বাম-প্রগতিশীল দল, ব্যক্তি গোষ্ঠী ও দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।