দেশে প্রতিদিন ‘গড়ে ৩ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার’

Posted: 11 অক্টোবর, 2020

একতা প্রতিবেদক : সারা দেশে গত চার বছর আট মাসে চার হাজার ৫৭৬ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে। এ হিসাব অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে ৮১.৭১ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। দৈনিক প্রায় তিন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তবে মানবাধিকার কর্মীদের মতে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। ধর্ষণের শিকার মোট চার হাজার ৫৭৬ জনের মধ্যে ছয় বছরের নিচে শিশুর সংখ্যা ৩৪১, আর এক হাজার ৯১৯ জনের বয়স ১৮ বছর পর্যন্ত। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মোট ৮৮৯ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। মানে, এ বছর প্রতি মাসে ১১১ জনের বেশি ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯৮ জন। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৫৭ জন। এপ্রিল মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭৬ নারী ও শিশু, মে মাসে ৯৪ জন। জুন মাসে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৭৪ জনে। জুলাই মাসে ১৪০ ও আগস্ট মাসে ১৪৮ জন। অর্থাৎ জুন, জুলাই ও আগস্টে গড়ে ১৫৪ জন করে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২০১৬ সালে সারা দেশে ৭২৪ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে এককভাবে ধর্ষিত হয়েছে ৪৪৪ জন। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৯৭ জন। এর বাইরে ধর্ষণের ধরন জানা যায়নি ১৮ জনের ক্ষেত্রে। একই বছর ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে আরো ৬৫ নারীকে। ওই বছর ৩৭ জন নারী-শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ধর্ষণের অপবাদ সইতে না পেরে আটজন আত্মহত্যা করেছে। বছরজুড়ে দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে মোট ৩৯৬টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। এদিকে, ২০১৬ সালে ৪৪৬ জন কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যাদের বয়স ১৮ বছর পর্যন্ত। এদের মধ্যে ছয় বছরের নিচে ৫২ জন। ১৫৯ জনের বয়স সাত থেকে ১২ বছর পর্যন্ত। এ ছাড়া ২৩৫ জনের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। ২০১৭ সালে সারা দেশে ৮১৮ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে এককভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৯০ নারী ও শিশু এবং ২০৬ জন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধরন জানা যায়নি, এমন আরো ২২ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া একই বছর ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে আরো ১০৪ জনকে। ওই বছর ধর্ষণের পরে ৪৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা করেছে ১১ জন। এসব ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে ৫১৭টি। সেইসঙ্গে একই বছর ৩৭৭ জন কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ছয় বছরের নিচে ৬০ জন। ১৪৪ জনের বয়স সাত থেকে ১২ বছর পর্যন্ত। এ ছাড়া ১৭৩ জনের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। ২০১৮ সালে সারা দেশে ৭৩২ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে এককভাবে ধর্ষিত হয়েছে ৫০২ জন। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২০৩ নারী ও শিশু। আর ধরন জানা যায়নি এমন আরো ২৭ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। একই বছর ১০৩ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৬৩ জনকে। এ ছাড়া ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে আরো সাতজন। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে ৫০৯টি। ২০১৮ সালে ২৭১ জন কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ছয় বছরের নিচে ৫১ জন। ১০৪ জনের বয়স সাত থেকে ১২ বছর পর্যন্ত। এ ছাড়া ১১৬ জনের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। ২০১৯ সালে সারা দেশে রেকর্ড নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ওই বছর সারা দেশে এক হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে একক ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক হাজার ৬৬ জন নারী। ৩২৭ জন নারী ও শিশু সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধরন জানা যায়নি এমন আরো ২০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। একই বছর ২২৪ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জনকে। আত্মহত্যা করেছে ১০ জন। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে ৯৯৯টি। ২০১৯ সালে ৫৬২ জন কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ছয় বছরের নিচে ১১৮ জন। ২১০ জনের বয়স সাত থেকে ১২ বছর পর্যন্ত। এ ছাড়া ২৩৪ জনের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। ২০২০ সালে ৩০৩ জন কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ছয় বছরের নিচে ৬০ জন। ১৩৩ জনের বয়স সাত থেকে ১২ বছর পর্যন্ত। এ ছাড়া ১৭০ জনের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক সচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশর চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য সামাজিক সচেতনতা দরকার। এই শিক্ষাটি একেবারে পরিবার থেকে দিতে হবে। ধর্ষণের মতো একটি ভয়ঙ্কর অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। আমরা আর একটিও ধর্ষণ দেখতে চাই না সমাজে। আমাদের নারীরা কেন ভয়ে ভয়ে চলবে সব সময়?’