উত্তরবঙ্গে চাই টমেটো সংরক্ষণের হিমাগার

Posted: 26 জুলাই, 2020

এস এম চন্দন : একটা সময় টমেটো ছিলো শীতকালীন সবজি। শুধু ধনীদের খাওয়ার টেবিলেই তা শোভা পেতো। কুচি করে কাটা লাল টমেটো সালাদের বাটির সৌন্দর্য বাড়াতো। দামি এই মহার্ঘ্য বস্তুটির বাংলা নামই দেয়া হয়েছিলো বিলাতি বেগুন। কালের পরিক্রমায় টমেটো এখন আর শীতকালে সীমাবদ্ধ নেই, বছরব্যাপী সবজিতে পরিণত হয়েছে। রবি এবং নাবি- দুই জাতের নানা ধরনের টমেটো বাজার দখল করেছে। রবি জাতটি শীতকালীন নিয়মিত ফসল, আর নাবি জাত গ্রীষ্মকালীন। একাধিক জাতের টমেটো আবাদে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। টমেটোজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদনের কারখানা গড়ে উঠেছে দেশে একাধিক। এর ফলে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে। আর আকর্ষণীয় চেহারার এই সবজি এখন ধনী ঘরের ডাইনিং টেবিলের গণ্ডি পেরিয়ে নিম্নবিত্তের হেঁসেলেও জায়গা করে নিয়েছে। আমাদের দেশের কৃষি সংস্কৃতির আবহমান ধারা ছিলো যে, যিনি ধানের আবাদ করেন, তিনি সাধারণতঃ অন্য ফসল আবাদে খুব বেশি মনোনিবেশ করেন না। কিন্তু গত কয়েক বছরে ধানের পাশাপাশি অন্য ফসল আবাদেও অনেকেই মন দিচ্ছেন। এক বিঘা জমিতে ধান লাগালে পাওয়া যায় সর্বোচ্চ প্রায় ৩০ মণ, আলু মিলবে ১০০ মণ, আর টমেটো লাগালে পাওয়া যাবে ৪০০ মণ। সরকারি হিসেবে ৩৩ শতকে এক বিঘা ধরা হলেও উত্তরবঙ্গের জেলায় জেলায় ৪৮ শতকের হিসেব করা হয়। বাংলাদেশের উত্তরাংশের দিনাজপুর জেলা ধান, আলু, আখ, আম ও লিচু উৎপাদনে সারা দেশে বিখ্যাত হলেও গত কয়েক বছরে টমেটোর চাষও এখানে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশের জেলা ঠাকুরগাঁও এবং হিমালয়কন্যা পঞ্চগড়েও এই সবজির আবাদ বেড়েছে। অনেক মানুষ টমেটো চাষ ও বিপণনের মাধ্যমে জীবীকা নির্বাহের নতুন উৎস পেয়েছেন। তবে পাশাপাশি কিছু সমস্যাও রয়েছে। টমেটো দ্রুত পচনশীল একটি সবজি। জাতভেদে এটি ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পচে যায়। তাই এর দ্রুত বাজারজাতকরণ জরুরি। কিন্তু বৃষ্টি-বাদলা বা পরিবহণ সংকট, কিংবা চলমান করোনার মত কোনো মহামারী-অতিমারীতে সৃষ্ট জাতীয় দুর্যোগ পরিস্থিতিতে টমেটো ঘরে রাখা চাষীর জন্য মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। সে কারণে এটি সংরক্ষণের উন্নত ব্যবস্থা থাকা দরকার। টমেটো আমাদের কাছে সবজি হিসেবে পরিচিত হলেও উদ্ভিদবিজ্ঞানে (ইড়ঃধহু) এর মর্যাদা ফল হিসেবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় বেরি (Berry) বলা হয়। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় টমেটোর জন্ম। মেক্সিকোর আদিবাসীরা বনেজঙ্গলে ঘোরার সময় এটি আবিষ্কার করেন। পরে স্পেনের নাবিকরা এটি নিয়ে যান ইউরোপে। ষোড়শ শতকে পর্তুগিজদের মাধ্যমে টমেটোর সাথে পরিচয় ঘটে ভারতীয়দের। এখন বিশে^র টমেটো উৎপাদনকারি ১৭৫ দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। শীর্ষস্থানে রয়েছে চীন। তাদের বার্ষিক টমেটো উৎপাদন ৬১.৫ মিলিয়ন টন। পৃথিবীর মোট টমেটো উৎপাদনের (Total global production) শতকরা ৩৩ ভাগ চীনেই হয়। ভারতের উৎপাদন তার চেয়ে অনেক কম, ১৯.৪ মিলিয়ন টন। বাংলাদেশও এই ১৭৫টি দেশের তালিকায় নাম লেখানোর গৌরব অর্জন করেছে। তার অবস্থান ৪৩তম। চলতি বছরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী উৎপাদনের পরিমাণ ১৬ লক্ষ ১২ হাজার ৩২১ মেট্রিক টন বা ১.৬ মিলিয়ন টনের কিছু বেশি (তথ্যসূত্র: হাসান ইমাম সাগর, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, খামারবাড়ী, ঢাকা)। এই উৎপাদন হয়েছে দেশের ৫৫ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন বছর বছর আরও বাড়ছে। পাশাপাশি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) বলছে, গোটা বিশে^ উৎপন্ন কৃষিপণ্যের অন্তত ৪০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায় উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে। পুষ্টিকর ফল কিংবা সবজি হিসেবে টমেটোর সুখ্যাতি আছে। ভিটামিন সি এর অন্যতম যোগানদাতা এটি। এর শতকরা ৯৫ ভাগই পানি, বাকিটা রয়েছে শর্করা, আমিষ এবং প্রোটিন। শরীরের ক্যালোরি পূরণে টমেটো অত্যন্ত উপযোগী। বাংলাদেশের অনেক জেলাতেই এখন প্রায় সারা বছর ধরেই টমেটোর আবাদ চলে। উত্তরবঙ্গ তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মত। টমেটো বিষয়ে আলোচনাটা শুরু করা যেতে পারে গত তিন বছরের চিত্র দিয়ে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জন্য ২০১৭ সালটি ছিলো নানা কারণে উল্লেখযোগ্য। ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবে বোরো ধান নষ্ট হওয়া, বন্যায় বীজতলা ডুবে যাওয়া, অতি বর্ষণে ফসলহানিসহ বিভিন্ন দুর্বিপাকে দিনাজপুর-রংপুর-বগুড়া অঞ্চলে কৃষকের ঘরে আর ফসলের মাঠে কান্নার রোল পড়েছিলো। সে বছর মৌসুমের সূচনালগ্নে টমেটোর মণ ছিলো সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা পর্যন্ত। তারপর আকস্মিক বৃষ্টিপাত, যা অব্যাহত থাকে টানা কয়েকদিন, পরিবহন আর বাজারজাতকরণের সমস্যায় সেই টমেটোর দাম এসে ঠেকে মণপ্রতি ৬০ টাকাতে। দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষক শ্যামল একটি এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১৫ কাঠা জমিতে টমেটো চাষ করেছিলেন। ফেরত এসেছে ১২ হাজার টাকা, সুদসহ বাকী টাকা কীভাবে দেবেন, সেই ভাবনায় অস্থির তিনি। দিনাজপুর সদরের উথরাইলের চাষি আকতারুজ্জামান টমেটো আবাদে ৭৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ৩৫ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। খেদোক্তির সাথে বললেন, ‘ধান লাগালে দাম পাইনা, তাই ভাবলাম এবার টমেটো লাগাই। সেখানেও এত বড় ধরা খাবো, সেটা চিন্তাই করিনি’। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালেও এই সবজি দিনাজপুরে ব্যাপক উৎপাদন হয়েছিলো, কিন্তু এই অঞ্চলের বৃহত্তম টমেটোর পাইকারি বাজার গাবুরায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে- চাষিরা পড়েছেন উভয় সংকটে, কারণ সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার ফলে দ্রুত পচনশীল পণ্যটি ঘরে রাখাও দায়, আবার যেনতেন মূল্যে ছেড়ে দেওয়াও মুশকিল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকার ও ব্যবসায়ীরা গাবুরা হাটে আসেন টমেটো কিনতে। সে বছর টমেটোর দাম মণপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকাতে নেমে গিয়েছিলো। তখনই সেখানকার টমেটোচাষিদের মুখে দাবি শোনা গিয়েছিলো- দিনাজপুরে টমেটোর হিমাগার চাই। সর্বশেষ ২০২০ সালের শুরুতে যে টমেটো তুলেছেন চাষিরা, তার প্রায় সবটাই সর্বগ্রাসী লোকসানের শিকার হয়েছে। করোনা ভাইরাসের অজুহাত দেখিয়ে পাইকার ও বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলো বলে অভিযোগ টমেটোচাষিদের। দিনাজপুর সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের দীঘন গ্রামের টমেটোচাষি ইমরান হোসেন চরম খেদ নিয়ে বললেন, ‘রোদ-জলে পুড়ে আমরাই আবাদ-সুবাদ করি, আর আমাদের ফসলের দাম ঠিক করে দেয় এসির বাতাস খাওয়া পাইকাররা।’ তিনি এবার টমেটো চাষ করে তাঁর ভাষায় ‘বিরাট ধরা’ খেয়েছেন। তিনি বললেন, এক বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করতে প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা খরচ পড়ে। এই টাকা কিস্তির সুদে এনজিও থেকে নেন অনেকেই। এক বিঘা জমিতে ৩০০ বা সর্বোচ্চ ৪০০ মণ টমেটো উৎপাদিত হয়। এবার করোনার ধুঁয়ো তুলে সিন্ডিকেটবাজ ব্যবসায়ীরা টমেটোর দাম প্রতি মণ ১০০ থেকে ৮০ টাকায় নামিয়ে এনেছিলো। ইমরান মনে করেন, টমেটো সংরক্ষণের উপযোগী হিমাগার থাকলে তাঁরা টমেটোগুলো আপাতত সেখানেই রেখে দিতেন। পরে লাভজনক দাম পাওয়া গেলে তখন বিক্রি করতেন। পচনশীল যেকোনো সবজি সংরক্ষণের সংকট, বড় শহরগুলোতে নিয়ে যাওয়ার পরিবহনের উচ্চ ভাড়া- এসব সমস্যার সাথে রয়েছে কৃষি উপকরণের উচ্চ মূল্য। সার, বীজ, কীটনাশক, বালাইনাশক, ডিজেল, বিদ্যুৎ, কৃষিশ্রমিকদের মজুরিসহ সবকিছুরই দর বেড়েছে অনেক। ক্ষেতমজুরের রোজগার বাড়ায় নিঃসন্দেহে তা গ্রামীণ গরিব মানুষের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে, কিন্তু সমানুপাতিক হারে যদি কৃষকের রোজগার ও আয়ও বাড়তো, তাহলে সেটা পুরো গ্রামীণ সমাজকেই ইতিবাচক ফলাফলের দিকে নিয়ে আসতো, গ্রামীণ অর্থনীতিকে দারুণভাবে সচল ও চাঙ্গা করতো। বাস্তবে হয়েছে উল্টো। কৃষকের লাভ কমেছে, লোকসান বেড়েছে। ক্ষেতমজুরের টাকা দেয়া তার জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ক্ষেতমজুররা মৌসুমী কৃষিশ্রমিক। ধানকাটা বা ফসল তোলার সময় তাদের কদর বাড়ে। বাড়ে উপার্জনও। কিন্তু কৃষক সেই অনুপাতে লাভ পান না, তার লাভের হারটা ব্যস্তানুপাতিক। আবার ধানকাটা শ্রমিকের রমরমা উপার্জন ওই ফসল তোলার মৌসুমেই। বছরের বাকি সময় ভ্যান চালানো, মাটি কাটা, ইট ভাটার শ্রমিক কিংবা অন্য কোনো কাজ। যার কারণে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা (Imbalance) তৈরি হচ্ছে। অনেক চাষী এখন চাষাবাদ ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনো পেশায় যুক্ত হওয়ার কথা ভাবছেন। মানিকগঞ্জের টমেটো ব্যবসায়ী মানিক এসেছিলেন দিনাজপুরের গাবুরায়, টমেটোর পাইকারি বাজারে। তিনি প্রতি বছর টমেটো কিনে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ জেলায় সরবরাহ করেন। ভালো লাভ থাকে তার। রাজবাড়ী থেকে দিনাজপুরে টমেটো কিনতে আসা পাইকার সুধন্য ঢাকার কোম্পানিতে সস্ প্রস্তুতের জন্য টমেটো সরবরাহ করেন, ভালোই লাভ থাকে। একই বাজারে টমেটো বিক্রি করতে আসা বনকালী গ্রামের তাহেরের খেদোক্তি ছিলো এই পাইকারদের পাশে বসেই, ‘সামনের বছর আর টমেটো লাগাবোনা। পরপর দুই বছর লস করলাম’। এক মণ টমেটো আবাদে যেখানে আড়াই শো টাকার মত খরচ পড়ে, সেখানে তিনি বিক্রি করেছেন ১৪০ টাকায়। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, দিনাজপুর সদরের শেখপুরায় গাবুরা নদীর পাড়ে যে টমেটো পাইকারি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫ টাকায়, সেটাই মাত্র ৬ কিলোমিটার পথ পার হয়ে শহরের বাহাদুর বাজারে এসে ২০ টাকা হয়ে যাচ্ছে। সারা দেশে প্রায় ৪১৬টি হিমাগার আছে। এগুলো আলু ও মাছ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। তবে টমেটো রাখার জন্য পৃথক বা বিশেষায়িত হিমাগার নেই উত্তরের আট জেলার কোথাও। এ ব্যাপারে একজন হিমাগার মালিকের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেছিলেন, ‘আলুর হিমাগারে টমেটো রাখা সম্ভব, তবে সে ক্ষেত্রে তাপমাত্রার তারতম্য ঘটাতে হবে। হিমাগারে শীতলীকরণ যন্ত্র চালিয়ে টমেটো সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা আনা যাবে, কিন্তু তাতে আলুর ওপর প্রভাব পড়বে। দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন হিমাগারের মালিকরা তাই শুধু টমেটো মজুদের জন্য এই ঝুঁকি নিতে নারাজ’। আরেকটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার যে, হিমায়িত (Freeying) করা হলে টমেটোর ঘ্রাণ (Flavor) নষ্ট হয়ে যায়, তাই বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিশেষায়িত হিমাগারেই টমেটো রাখা দরকার। দিনাজপুর জেলায় কৃষক-ক্ষেতমজুরদের নিয়ে মাঠ পর্যায়ে বহু বছর ধরে কাজ করছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সম্পাদক ও কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক বদিউজ্জামান বাদল। দিনাজপুরে টমেটোর হিমাগারের প্রাসঙ্গিকতার বিষয়ে তিনি বললেন, ‘দিনাজপুরে গাবুরা এবং জনতার মোড় টমেটোর পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত। দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন টমেটো কিনতে। কিন্তু আমরা দেখেছি, অনেক সময় উৎপাদন খরচ না ওঠা কিংবা সময়মত পরিবহণ না পাওয়ায় অনেক চাষির টমেটো নষ্ট হয়ে যায়।’ তিনি বললেন, বছর দুয়েক আগে দাম না পেয়ে এবং নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কিছু চাষি গাবুরার পাশে গর্ভেশ্বরী নদীতে টমেটো ফেলে দিয়েছিলেন। টমেটোকে কাজে লাগিয়ে সস-চাটনি-আচার-জুস ইত্যাদি প্রস্তুতের কারখানাও এই এলাকায় করা যেতে পারে বলে মত দেন তিনি। দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ কৃষি বছরে এই জেলায় শাক-সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৩ হাজার ৭৮৮ হেক্টর জমিতে। অর্জন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। মোট ১৪ হাজার ২৪৬ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে সবজি ও শাক। এর মধ্যে টমেটো আবাদ হয়েছে ২৬৯৮ হেক্টর জমিতে। নাবি জাতের টমেটো (যা শীতের শুরু থেকে বসন্তকাল পর্যন্ত আবাদ ও উত্তোলিত হয়) উৎপাদন হয়েছে ৫১ হাজার ৪৬৮ মেট্রিক টন। রবি জাতের টমেটো (শীতকালীন) একই সময়ে উৎপাদন হয়েছে ৪৭ হাজার ৬১৫ মেট্রিক টন। বিপুল পরিমাণ এই টমেটো আবাদ হয়েছে শুধু দিনাজপুর জেলায়। পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও-নীলফামারী জেলার ১৬ উপজেলার হিসেব করলে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়বে। যেহেতু এই পণ্যের চাহিদা এবং যোগান দুটোই আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, সে কারণে এর সংরক্ষণ করাও জরুরি হয়ে পড়েছে। এখন শুধু সালাদ হিসেবেই নয়, সস-চাটনি-আচার তৈরিসহ জুস হিসেবেও টমেটোর রসের চাহিদা বেড়েছে। তাই উত্তরবঙ্গে টমেটো সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণ এবং টমেটোজাত খাদ্যপণ্য প্রস্তুতের কারখানা স্থাপন এখন সময়ের দাবি। এতে একদিকে কৃষক তার ফসলের লাভজনক দাম পাবেন, একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে হিমাগারে কিছু শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে, সারা বছর টমেটোর প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে, এবং পর্যায়ক্রমে হয়তো একসময় রপ্তানি পণ্যের তালিকায় টমেটোকেও অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। লেখক: কৃষি অর্থনীতি বিষয়ক লেখক