শ্রমিক ছাঁটাই-নির্যাতন, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বন্ধ না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন

Posted: 05 জুলাই, 2020

একতা প্রতিবেদক : শ্রমিক ছাঁটাই-মামলা-নির্যাতন বন্ধ এবং তাদের স্বাস্থ্য-চাকরি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। গত ২৮ জুন বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামন থেকে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভে করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতেও বিভিন্ন শিল্প এলাকার সহস্রাধিক শ্রমিক অংশ নেন। বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে গার্মেন্ট টিইউসি নেতৃবৃন্দ বলেন, মহামারীকালে একদিকে মানুষ চিকিৎসার অভাবে, অক্সিজেন না পেয়ে মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে শ্রমিকদের ওপর চলছে ছাঁটাই-মামলা-গ্রেফতারসহ সীমাহীন জুলুম নির্যাতন। নেতৃবৃন্দ এইসব বন্ধ না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে ঘোষণা দেন। সমাবেশ শেষে শ্রমিকদের একটি বিশাল মিছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে রওনা হয়। পথে কদমফুল ফোয়ারার সন্নিকটে এবং মৎস ভবন মোড়ে পুলিশ মিছিলে বাধা দিলেও ওই বাধা অতিক্রম করে মিঠিল অগ্রসর হয়। পরে মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে পৌঁছালে ব্যাপক পুলিশি বাধার মুখে শ্রমিকরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে। শেষে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি ও দাবিনামা দেয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সামনে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’র সভাপতি মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, কার্যকরি সভাপতি কাজী রুহুল আমীন, কেন্দ্রীয় নেতা সাদেকুর রহমান শামীম, জালাল হাওলাদার, এমএ শাহীন, সাইফুল আল মামুন, মঞ্জুর মঈন, জয়নাল আবেদীন। সভাপতির বক্তব্যে শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষ বলেন, কারখানায় একদিকে শ্রমিকের সংক্রমণ ঝুঁকি এড়ানোর সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়নি, অন্যদিকে লক্ষণ দেখা দিলেই শ্রমিক চাকরি হারাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বাজেটে শ্রমিকের রেশনিং ও বাসস্থানের জন্য অর্থ বরাদ্দের দাবিতে আন্দোলন করে এলেও সরকার আমাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি। এই মহামারীকালীন বাজেট অন্তত ব্যতিক্রম হতে পারতো। অথচ দেশের মালিক শ্রেণির জন্য সকল সুবিধা ও প্রণোদনা নিশ্চিত করা হলেও শ্রমিকের জন্য কোনরকম ন্যূনতম খাদ্য নিরাপত্তা অর্থাৎ রেশনিং এর ব্যবস্থা রাখা হয়নি। মন্টু ঘোষ আরো বলেন, মহামারীর এই অল্প সময়ে লক্ষাধিক শ্রমিক ছাঁটাই অতীতের সকল দৃষ্টান্ত অতিক্রম করেছে। ১৩ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জের প্যারাডাইস ক্যাবল কারখানার শ্রমিকরা গত ২১ জুলাই থেকে ঢাকায় শ্রম ভবনের সামনে লাগাতার অবস্থান করে যাচ্ছে, কিন্তু মালিককে আটক করে সংকটের সুরাহা করতে কেউ উদ্যোগ নিচ্ছে না। ঢাকার মালিবাগের ড্রাগন সোয়েটার কারখানার মালিক শ্রমিকদের আইনী পাওনা বঞ্চিত করে কারখানা বন্ধ করেছে। তিনি অবিলম্বে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সংকট সুরাহা করার দাবি জানান। সমাবেশে গার্মেন্ট টিইউসির সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, মানুষ এত অসহায়ত্বের মধ্যে কখনোই পড়ে নাই। সর্বস্ব দিয়েও চিকিৎসা মিলছে না। অন্যদিকে ন্যূনতম সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়াই শ্রমিকরা কারখানায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। মহামারীর সত্ত্বেও মালিকরা তাদের মুনাফার অংক ঠিক রাখতে শ্রমিক ছাঁটাই, শ্রমিকদের আইনগত পাওনা বঞ্চিত করাসহ ব্যপক জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। প্রতিকার চেয়ে সরকারি দপ্তরের বারান্দায় দিনরাত ধর্ণা দিয়েও সুরাহা পাচ্ছে না শ্রমিকরা। প্রতিবাদ করায় গার্মেন্ট টিইউসি নেতৃবৃন্দসহ শ্রমিকদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে, গ্রেফতার হয়রানি চলছে। সরকার এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল বন্ধের গণ বিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জলি তালুকদার আরো বলেন, পর্যাপ্ত কোভিড-১৯ পরীক্ষা হচ্ছে না, শ্রমিকের ক্ষেত্রে এই অপর্যাপ্ততা আরো অনেক বেশী। বাস্তবতা হলো, এই মহামারী পরিস্থিতিতে অনেক অবস্থা সম্পন্ন মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না। সেখানে শ্রমিকের অবস্থা আরো শোচনীয়। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও দেশে সব মানুষের জন্য ন্যূনতম চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। অথচ মুক্তিযুদ্ধের রূপকল্পে এমন বাংলাদেশ হওয়ার কথা ছিলো না। তিনি নিজেদের জীবন বাঁচাতে দেশের ভুক্তভোগী মানুষকে সাথে নিয়ে সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য গার্মেন্ট শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান।