স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পাটমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি বাম গণতান্ত্রিক জোটের

Posted: 05 জুলাই, 2020

একতা প্রতিবেদক : রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল, পাটকলগুলো আধুনিকায়ন করা, পাট খাতে দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ, ভুলনীতি পরিহার; যতবার খুশি ততবার জ্বালানির দাম বৃদ্ধির অশুভ উদ্দেশ্যে সংসদে উত্থাপিত বিল প্রত্যাহার, সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধি, দুর্নীতি-অনিয়ম-লুটপাট বন্ধ, দুর্নীতিবাজদের বিচার এবং করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় খরচে বিনামূল্যে সকল নাগরিকের করোনা টেস্ট ও চিকিৎসা, বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে অধিগ্রহণ করে করোনা চিকিৎসায় কাজে লাগানো, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, কর্মহীন-রোজগারহীনদের ত্রাণ সহায়তা ও রেশন দেয়ার দাবিতে সমাবেশ ও মিছিল করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এ কর্মসূচিতে থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পাটমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে তারা। গত ২ জুলাই সকাল ১১ টা ৩০ মিনিটে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে পৌঁছালে পুুলিশি বাধার মুখে সেখানে সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হয়। বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সহকারি সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য আকবর খান, কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক। সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতা সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাফি রতন, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা ফখরুদ্দিন কবীর আতিক, কমিউনিস্ট লীগের শামীম ইমাম, বাসদ নেতা জুলফিকার আলী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহিদুল ইসলাম সবুজ। রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধ করে পিপিপি‘র মাধ্যমে পরিচালনার সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করে ১২০০ কোটি বরাদ্দ করে পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করার দাবি জানিয়ে সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এই পাটকলগুলোকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে কিভাবে লাভজনক করা যাবে তার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু সরকার তা আমলে না নিয়ে আধুনিকায়নে যত টাকা লাগবে তারও ৫ গুণ বেশি অর্থ্যাৎ ৬০০০ কোটি টাকা ব্যয় করে দক্ষ শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বেকার করে পাটকলগুলো পিপিপি‘র নামে ব্যাক্তি মালিকদের হাতে তুলে দিচ্ছে। তারা বলেন, করোনাকালে যখন কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হচ্ছে, মানুষ কর্মচ্যুত হয়ে বেকার হচ্ছে, বিদেশ থেকেও শ্রমিকেরা দেশে ফেরৎ আসছে, সেই সময় রাষ্ট্রের দায়িত্ব নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। কিন্ত বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না বলেই পাটকল শ্রমিক, পাটচাষী ও তাদের পরিবারসহ প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষকে অনিশ্চয়তা আর দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। লোকসানের অজুহাত তুলে রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো নামমাত্র মূল্যে বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দিচ্ছে। সমাবেশে বাম নেতারা এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল করা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যর্থতা আড়াল করার উদ্দেশ্যে জনগণকে করোনা টেষ্টে নিরুৎসাহিত করতেই করোনা টেষ্টে ২০০ ও ৫০০ টাকা হারে ফি ধার্য করা হয়েছে। এমনিতেই করোনা উপসর্গ গোপন করার প্রবণতা জনগণের রয়েছে বলে শোনা যায়। তাছাড়া পরিকল্পনাহীন লকডাউনের প্রেক্ষিতে মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষমতাও কমেছে। এর ওপর টেস্টে ফি লাগলে সাধারণ দরিদ্র জনগণ টেস্ট করাতেই যাবে না। এতে করে করোনা সংক্রমণ বহুগুণে বেড়ে যাবে। তাই করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষায় সরকারি হাসপাতালে ফি নির্ধারণের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্বেই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সকল নাগরিকের করোনা টেস্ট ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, একদিকে করোনা দুর্যোগ তার মধ্যে সরকার পানির দাম বাড়াচ্ছে, জ্বালানির দাম যখন খুশি তখন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সংসদে বিল তুলছে। জনগণ সরকারের এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত মেনে নিবে না। সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ অযোগ্য ও ব্যর্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং পাটমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন।