ইইউর বিলিয়ন ডলারের বিশাল অর্থনৈতিক প্রস্তুতি

Posted: 22 মার্চ, 2020

একতা বিদেশ ডেস্ক : ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক-ইসিবি ইউরো জোনের সদস্য ১৯ দেশের অর্থনীতির ওপর করোনা ভাইরাসের প্রভাব কমাতে সাড়ে সাতশ বিলিয়ন ইউরো বা ৬৯ লাখ ৫১ হাজার ২২১ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করছে। ইসিবি প্রধান ক্রিস্টিয়ান ল্যাগার্দ বলেছেন, ইউরো ঠিক রাখতে এমন কিছু করা হবে যার কোনো ‘নির্দিষ্ট সীমা’ নেই। অর্থাৎ সম্ভাব্য সবকিছু করার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। ১৯ মার্চ ইসিবির এসব ঘোষণায় পুঁজিবাজারে ইতিবাচক ফল দেখা গেছে। এর আগে করোনার প্রভাব কমাতে ইসিবি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কম সুদে ঋণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু সেই পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছিল। ফলে করোনা মোকাবিলায় ইসিবি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে সমালোচনা হয়েছিল। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ও জার্মানির অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী পেটার আল্টমায়ার ইসিবির সবশেষ সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ১৭ মার্চ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের ২৫ সদস্য টেলিফোনে জরুরি বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেন। ‘প্যানডেমিক ইমার্জেন্সি পারচেজ প্রোগ্রাম’ শীর্ষক এই প্যাকেজ দিয়ে ইউরোজোনের দেশগুলোর সরকারি ও কর্পোরেট বন্ড কেনা হবে। এটি একটি সাময়িক প্যাকেজ বলে জানানো হলেও অন্তত এই বছর পর্যন্ত তা চলবে বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে। আর করোনা ভাইরাসের জেরে ইটালি থেকে কেউ অস্ট্রিয়ায় যেতে পারবেন না। ১৬ মার্চ থেকে বন্ধ করা হয়েছে অস্ট্রিয়া-ইটালি সীমান্ত। ইউরোপের সীমান্ত বন্ধ ঘোষণার পর ইইউভুক্ত দেশগুলোর নিজেদের মধ্যেও এই সীমান্ত বন্ধ প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানো রোধ করতে ইটালিজুড়ে জারি হয়েছে বেশ কিছু কড়া বিধি নিষেধ। উত্তর ইটালি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। মিলান, ভেনিসসহ উত্তর ইটালির পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সমস্ত সিনেমা হল, জাদুঘর ও থিয়েটার বন্ধ। উত্তরাঞ্চল থেকে ইটালির অন্যত্র যাওয়া আসার পথও সব বন্ধ। এর মধ্যে, অস্ট্রিয়ার সরকার ঘোষণা করেছে যে তারা ইটালির সাথে সমস্ত রকম পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ রাখছে। উত্তর ইটালির সাথে সীমান্ত রয়েছে অস্ট্রিয়ার। সে কারণেই এমন সিদ্ধান্ত। চেক প্রজাতন্ত্র, ইটালি, পোল্যান্ড ও জার্মানির কিছু অংশে বর্তমানে স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। ইউরোপের বেশ কিছু দেশে বড় আকারের সব অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা। এদিকে, মার্কিন অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ৭০০ বিলিয়ন ডলার বা ৫৯ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৭ কোটি টাকার স্টিমুলাস প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এছাড়া সুদের হার প্রায় শূণ্যে নামিয়ে এনেছে। ২০২০ সালের ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’, অর্থাৎ অলিম্পিক গেমস নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। অলিম্পিক গেমস শুরু হওয়ার কথা আগামী ২৪ জুলাই থেকে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে মৃত্যুর মিছিল শুরু হওয়ায় আসরের আয়োজন নিয়েই দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ১৫ মার্চ বেশ কিছু দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)। আলোচনা শেষে এক বিবৃতিতে আইওসি বলেছে, “গেমসের চার মাসের বেশি বাকি থাকতে কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন নেই। এখনই কিছু অনুমান করতে যাওয়া হবে অগঠনমূলক।” আয়োজক জাপানের প্রধানমন্ত্রী আগেই বলেছেন, তার দেশ চায় সময়মতো অলিম্পিক আয়োজন করে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবজতির জয় ঘোষণা করতে। অলিম্পিক গেমস না হলে বা পিছিয়ে গেলে আয়োজক জাপান, আইওসি, ক্রীড়াবিদ, স্পন্সর এবং প্রচারের স্বত্ব পাওয়া টিভি চ্যানেল- সবারই বিশাল অঙ্কের ক্ষতি হবে। তাই আগেই ‘নেতিবাচক’ সিদ্ধান্ত নিতে সবাই নারাজ। ১১ হাজার ক্রীড়াবিদের এই আয়োজন সার্থক করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে সব পক্ষ। আয়োজক জাপান, আইওসি এবং অংশগ্রহণেচ্ছু দেশগুলো অনিবার্য কারণে আসর পেছাতে বা বাতিল করতে বাধ্য হলে ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে না। আগেভাগে পেছানো বা বাতিল করা হলে ক্ষতিপূরণ দেবে না ইনস্যুরেন্স কোম্পানি। টোকিও অলিম্পিকের আয়োজক কমিটি গত ডিসেম্বরে জানিয়েছিল, আসরের আয়োজনে তাদের ১১৫০ কোটি ডলারের মতো খরচ হয়ে গেছে। আয়োজকরা তখনই বলেছিল, ম্যারাথন টোকিও থেকে সাপ্পোরোতে সরিয়েনেয়াসহ আরো কিছু কাজে যে ব্যয় হবে তা হিসেব করা হয়নি। স্পন্সর কোম্পানিগুলোর ক্ষতির দিকটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে আয়োজক কমিটি এবং আইওসিকে। টয়োটা, ব্রিজস্টোন, প্যানাসনিক এবং স্যামসাংয়ের মতো প্রতিষ্ঠান প্রচুর বিনিয়োগ করেছে এই আসরে। জাপানের কোম্পানিগুলোই নাকি ২৭৫ কোটি ডলারেরও বেশি খরচ করেছে। অলিম্পিক আয়োজনে সর্বোচ্চ ২৩০০ কোটি ডলার ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন মহাযজ্ঞে আইসির অবদান সাত কোটি ৪০ লক্ষ ইউরো। তবে কেউ কেউ সুপারিশ করছে জুলাইতে না হলে আগামী অক্টোবর মাসে আয়োজন করা যেতে পারে অলিম্পিক গেমস। তখন হলে সমস্যা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসির। কারণ, সেপ্টেম্বরে শুরু হবে এনএফএল। বাস্কেটবলের এই আকর্ষণীয় আসরের সম্প্রচার স্বত্ব পেয়েছে এনবিসি। অবশ্য বাতিল না করলে আগামী বছর বা তার পরেও হতে পারে অলিম্পিক। তাতে অন্য ধরনের জটিলতার আশঙ্কা থাকলেও সেটাও হবে মন্দের ভালো।