ডা. সারওয়ার আলীর ওপর হামলা

Posted: 12 জানুয়ারী, 2020

একতা প্রতিবেদক : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি, ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার উদ্দেশে হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম এক বিবৃতিতে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, হত্যার উদ্দেশে বাড়িতে ঢুকে ডা. সারওয়ার আলীর মতো বরেণ্য ব্যক্তি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে, তাতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির বিষয়টি আবারও তুলে ধরেছে। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। পরিস্থিতি এখন এতটাই নাজুক যে, সন্ত্রাসীরা বাড়িতে ঢুকে হামলা চালানোর সাহস দেখাচ্ছে! এই পরিস্থিতি কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। গত ৫ জানুয়ারি রাতে উত্তরার বাড়িতে ডা. সারওয়ার আলী ও তার স্ত্রী কমিউনিটি ক্লিনিকের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মাখদুমা নার্গিস, তাদের মেয়ে সায়মা আলী, জামাতা হুমায়ুন কবিরকে ছুরিকাঘাতে হত্যার চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসা দুই প্রতিবেশীও ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন। সারওয়ার আলী পরে অজ্ঞাত-পরিচয় চার–পাঁচজনকে আসামি করে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত ৫ জানুয়ারি রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে অজ্ঞাতপরিচয় দুই দুর্বৃত্ত উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে সারওয়ার আলীর বাড়িতে ঢোকে। তারা ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় গিয়ে তার মেয়ে সায়মা আলীর বাসার দরজায় ধাক্কা দেয়। দরজা খুলে দেওয়া হলে দুর্বৃত্তরা ভেতরে গিয়ে সারওয়ার আলীর মেয়ে ও জামাতাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা চালায়। পরে বাড়ির চতুর্থ তলায় গিয়ে সারওয়ার আলী ও তার স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় তাদের চিৎকারে ওই ভবনের এক বাসিন্দা ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ওই বাসা থেকে দুর্বৃত্তদের ফেলে যাওয়া মোবাইল ফোন, একটি ব্যাগে থাকা সাতটি চাপাতি, বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার যন্ত্র, টিভি ক্যামেরার স্ট্যান্ড, সিনথেটিক দড়ি ও কেমিক্যাল স্প্রে উদ্ধার করেছে। প্রগতিশীল সংগঠনসমূহের উদ্যোগে গত ৬ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে শাহবাগ, ঢাকায় বিএমএ’র প্রাক্তন মহাসচিব ও মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলীর ‘প্রাণ নাশের প্রচেষ্টাকারীদের গ্রেপ্তার কর, বিচার কর’ এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে দাবি করা হয় গত ৫ জানুয়ারি রাতে ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি, ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্টের উপদেষ্টা এবং বিএমএ-র প্রাক্তন মহাসচিব ডা. সারওয়ার আলীর প্রাণ নাশের প্রচেষ্টা এবং তাঁর পরিবারের উপর ন্যাক্কাজনক আক্রমণ ও হামলার ঘটনায় দায়ীদের গ্রেফতারের জোর দাবি জানানো হয়। উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক প্রকৌশলী নিমাই গাঙ্গুলী, ছায়ানটের সহ-সভাপতি আবুল হাসনাত, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহা, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, বিএমএর প্রাক্তন সভাপতি ও ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্টের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়জুল হাকিম লালা, সিপিবি’র সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, বাংলাদেশ মেডিকেল সোসাইটি ইউ.কে-এর সভাপতি ডা. রফিকুল হাসান জিন্নাহ। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা ডা. সারওয়ার আলী ও তাঁর পরিবারের উপর সাম্প্রদায়িক শক্তির এই ন্যাক্কারজনক হত্যাচেষ্টার পেছনে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার ও বিচারের জোর দাবি জানান। সভায় সভাপতিত্ব করেন ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম. আবু সাঈদ। এদিকে ডা. সারওয়ার আলীর ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড আর্কিটেক্টস ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট। সংগঠনটির সভাপতি প্রকৌশলী আবু মো. ইউসুফ এবং সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী নিমাই গাঙ্গুলি এক বিবৃতিতে হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান।