২৯ নভেম্বর পাল্টা কংগ্রেসের ডাক ওয়ার্কার্স পার্টির একাংশের

‘দক্ষিণপন্থি সুবিধাবাদ, বুর্জোয়া লেজুড়বৃত্তি ও বিলোপবাদীদের কংগ্রেসে অংশ না নেওয়ার আহ্বান’

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
একতা প্রতিবেদক : ওয়ার্কার্স পার্টির কংগ্রেস বর্জনের ডাক দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের ২৯ নভেম্বরের পাল্টা কংগ্রেসে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দলটির একাংশ। পলিটব্যুরোর দুই সদস্য; কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল কমিশনের চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য এবং একজন বিকল্প সদস্য গত ৩১ অক্টোবর লেখা এক খোলা চিঠিতে রাশেদ খান মেনন নেতৃত্বাধীন দক্ষিণপন্থি সুবিধাবাদ, বুর্জোয়া লেজুড়বৃত্তি ও বিলোপবাদীদের ২-৫ নভেম্বরের কংগ্রেসে অংশ না নিতে আহ্বান জানান। নুরুল হাসান, ইকবাল কবির জাহিদ, অনিল বিশ্বাস, জাকির হোসেন হবি, মোফাজ্জেল হোসেন মঞ্জু এবং তুষার কান্তি দাস স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ১৯৯২ সালের ৪ঠা মে ঐক্য কংগ্রেসে গৃহীত মতাদর্শগত, নীতি ও কৌশল থেকে পাটিক্রমান্বয়ে দক্ষিণপন্থী, বিলোপবাদী ধারায় অধঃপতিত হয়েছে। ঐক্য কংগ্রেসের লক্ষ্য ছিল কমিউনিস্ট ঐক্যকে এগিয়ে নেওয়া, বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামই হবে পাটির্র ভিত্তিমূলক কাজ। পার্টির বর্তমান নেতৃত্ব ঐক্য কংগ্রেসের মতাদর্শ নীতি, কৌশল ও সংগঠন সম্পর্কে গৃহীত ভিত্তি ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে। ‘আমরা দীর্ঘ দিন ধরে পার্টির অভ্যন্তরে মতাদর্শগত বিচ্যুতি, বুর্জোয়া লেজুড়বৃত্তি ও বিলোপবাদী রাজনীতির বিরোধিতা করে আসছি। ইতোমধ্যে পার্টি তার সংগ্রামী ভাবমূর্তি হারিয়ে ফেলেছে এবং জনগণ থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। পার্টি ও তার গণসংগঠনসমূহ দুর্বল হয়ে পড়েছে। ১৪ দলের সাথে কর্মসূচি ভিত্তিক ঐক্য, হাতুড়ী ছেড়ে নৌকা মার্কয় নির্বাচন ও সরকারে মন্ত্রীত্ব গ্রহণের মাধ্যমে পার্টির নীতি আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়েছে। এই ভ্রান্তনীতির অনুসরণের ফলে পাটির্র অগণিত নেতা, কর্মী এবং জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বরিশালে জেলা সম্মলনে অগণিত পাটি কর্মী এবং জনগণের দাবির মুখে ২০১৮ সনের প্রহসনের নির্বাচন সম্পর্কে পার্টি সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন যে সত্য উচ্চারণ করেছিলেন পরদিন তার ইউটার্ন পাটি অনুসৃত বর্তমান রাজনীতিরই অনিবার্য ফল। ‘বাংলাদেশে বর্তমান বাস্তবতায় গণতান্ত্রিক ব্যবহার বিপর্যয়, দুর্নীতি দুর্বত্তায়ন যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে তার জন্য ১৪ দল ও সরকার দায়ী। ওয়ার্কার্স পার্টির এই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তাতে করে আর ১৪ দল ও সরকার নয়, পার্টির স্বাধীন ভূমিকা নিতে হবে। অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির সকল প্রকার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ, সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ‘বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি বর্তমানে মার্কসবাদী- লেনিনবাদী আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে সংস্কারবাদী, সুবিধাবাদী পার্টিতে পরিণত হয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্ব আজ রাজনৈতিক দুর্নীতির পাশপাশি অর্থনৈতিক দুর্নীতিতে আক্রান্ত, বা বাস্তবতার নামে বুর্জোয়া লেজুড়বৃত্তি রাজনৈতিক লাইন ও জোটনীতি তথা আওয়ামী লীগের সাথে স্থায়ী ঐক্যের যে নীতি-কৌশল গ্রহণ করে চলেছে তাতে ওয়াকার্স পার্টি অধঃপতিত হয়ে দেউলিয়া পাটির্তে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে আন্তঃপার্টি সংগ্রাম তথা দুইলাইনের সংগ্রামকে গলা টিপে হত্যা করতে শীর্ষ নেতৃত্বের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে বিভিন্ন জেলায় অবিশ্বাস্য সংখ্যক পার্টি সভ্যপদ প্রদানের মাধ্যমে ভূয়া পধতিনিধিদের ১০ম পাটি কংগ্রেসে উপস্থিত করানোর সকল আয়োজন ও প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছে। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কংগ্রেস অনুষ্ঠানে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় পার্টি সভ্যপদ যাচাই-বাছাই করার প্রস্তাব আমরা উত্থাপন করেছিলাম। কিন্ত সভ্যপদ যাচাই-বাছাই এর ঐ প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। সুতরাং একথা এখন নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, পার্টি সভ্যপদ যাচাই না করে অবৈধ প্রতিনিধিদের নিয়ে পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হলে ঐ কংগ্রেস হবে অবৈধ কংগ্রেস। তাই নতজানু আপসকামী তথা তালমিল করে চলার নীতি পরিহার করে আদর্শের প্রতি অবিচল থাকতে ‘আমরা ১০ম পার্টি কংগ্রেসে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। লাল পতাকাকে সমুন্নত রাখতে দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদকে পরাস্তÍ করে সত্যিকারেরবিপ্লবী পার্টি, কমিউনিস্ট ঐক্য, বাম-গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে তুলতে সকল পার্টি কমরেডদের এই প্রহসনের কংগ্রেসে অংশ না নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি এবং আগামী ২৯ নভেম্বর ২০১৯ শুক্রবার এক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত সম্মেলন সফল করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি,’ বলেন তারা। বাম গণতান্ত্রিক দলগুলোর সঙ্গে বিমল বিশ্বাসের মতবিনিময়: একইদিন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কমরেড বিমল বিশ্বাস পুরানা পল্টনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে বাম গণতান্ত্রিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তার সঙ্গে মতবিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মনিরউদ্দিন পাপ্পু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, গরিব মুক্তি আন্দোলনের শামসুজ্জামান মিলন। অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন আজিজুর রহমান, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, শামীম ইমাম। মতবিনিময় সভায় বিমল বিশ্বাস কি পরিস্থিতিতে তিনি ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্যপদ প্রত্যাহার করেছেন সে বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি লুটেরা বুর্জোয়া রাজনীতির বিপরীতে বিকল্প গড়ার সংগ্রাম এগিয়ে নিতে কমিউনিস্ট ও বাম গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যের আহ্বান জানান।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..