আগের রাতে ভোট, ভোটের দিনে কেন্দ্র দখল

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

শেখ বাহার মজুমদার : ময়মনসিংহ-৪, সদর আসন : ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার মাসাধিককাল পূর্বেই সিপিবি জেলা কমিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণা করে নির্বাচনী কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সাধ্য অনুযায়ী মতবিনিময়, বৈঠক, পথসভা, গণসংযোগ, মাইকিং, প্রচারণা চালানো হয়। নির্বাচনী প্রচারণার সময় সদর উপজেলার দাপুনিয়া বাজার, শম্ভুগঞ্জ বাজার, কাশিমপুর বাজার, জামতলা মোড়, সানকিপাড়া এলাকায় বামজোটের নেতাকর্মীদের মহাজোট কর্মীরা বাধা ও হুমকি দেয়। শহরের নতুন বাজার এলাকায় মাইকিং করার সময় বিএনপি নেতা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হুমকি দেয়, মাইকিং-এ শ্লোগান দিচ্ছিল যে, ‘এক জোটে রাজাকার, আরেক জোটে স্বৈরাচার”- তখন বিএনপি নেতা গালিগালাজ করে বলে আমাদের জোটে রাজাকার কই? ড. কামাল আছে, মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী, রব-মান্না আছে। ২৯ তারিখ রাত থেকেই বিভিন্ন জায়গায় সশস্ত্র মহড়া প্রদর্শন শুরু করে মহাজোট নেতারা-কর্মীরা, যার ফলে ভোটপূর্ব সময় থেকেই মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং ভোটার ভোট কেন্দ্রে যেতে ভয় পান। শহরতলীর আকুয়া এলাকায় আওয়ামী বাহিনীর আগের রাতে সশস্ত্র মহড়ার ফলে ভোটের দিন ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন। ফলশ্রুতিতে আকুয়া ইউনিয়নের ৯০ শতাংশ ভোট মহাজোট প্রার্থী জোর জবরদস্তি করার সুযোগ পায়। অধিকাংশ এলাকার রিপোর্ট-পূর্ব রাতেই প্রিসাইডিং অফিসারদের সহায়তায় জাল ভোট প্রদান শুরু হয়। নির্বাচনের দিন কৃষ্টপুর কেন্দ্রে প্রার্থীর গাড়িতে বিএনপি বাহিনী হামলা করে গাড়ির কাঁচ ভেঙে ফেলে। আওয়ামী বাহিনী মোটরসাইকেল যোগে বন্দুক উঁচিয়ে ফায়ার করতে থাকলে এবং রাম দা-লাঠিসহ মহড়া দিতে থাকলে শহরের চরপাড়া, এডওয়ার্ড স্কুল ভোট কেন্দ্রসহ আশেপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং ভোটাররা কেন্দ্র ছেড়ে চলে গেলে মহাজোট কর্মীরা প্রশাসনের সহায়তায় প্রকাশ্য জালভোট প্রদান করে। নওমহল সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ে আওয়ামী নেতাদের নেতৃত্বে দুপুর ১টার দিকে ভোট কেন্দ্র শূন্য করে জাল ভোট দিতে থাকে। ভোটের দিন ভোর থেকে কেন্দ্রগুলোর অবস্থা ভালো দেখালেও বেলা বাড়ার সাথে সাথেই চিত্র বদলে যেতে থাকে। সকাল ১১টা থেকে শহরের ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়, মহিলা কলেজ, হাউজিং এস্টেট প্রাঃ বিঃ, বিদ্যাময়ী স্কুল, পুলিশ লাইন স্কুল, বলাশপুর সঃ প্রাঃ বিঃ, মুকুল নিকেতন স্কুল, কুমার উপেন্দ্র বিদ্যাপীঠ, কৃষ্টপুর স্কুল, গন্দ্রপা সঃ প্রাঃ বিঃ, নাসিরাবাদ কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আমাদেরসহ অন্যান্য এজেন্টদের বের করে দিয়ে প্রকাশ্য ভোট দেয়া শুরু করে মহাজোট নেতাকর্মীরা। এছাড়া শহরস্থ অন্যান্য কেন্দ্রেও দুপুরের পর আমাদের অধিকাংশ এজেন্টদের থাকতে দেয়া হয় নি। সদর আসনে মোট ১৭৬ কেন্দ্রের মধ্যে ৭০টির অধিক কেন্দ্রে আমাদের শতাধিক এজেন্টদের মধ্যে মাত্র ৩৯টি কেন্দ্রে ভোট গণনা পর্যন্ত আমাদের এজেন্টরা অবস্থান করতে পেরেছে। সদর উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের চিত্র মোটামুটি একই। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এজেন্ট বের করে দেওয়ার খবর আমাদের হাতে আসতে থাকে। ভোটের দিন বাকৃবি কেন্দ্রে ছাত্র নেতাদের লাঞ্ছিত করা হয়। পরানগঞ্জ ইউনিয়নের ফলিয়ামারী কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে মহাজোট প্রার্থী ছাড়া বাকি সবার ভোটার লিস্ট ছিঁড়ে ফেলে এজেন্ট বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে লাঙ্গলের পক্ষে ভোট দিতে থাকে। অষ্টধার, কুষ্টিয়া, পরানগঞ্জ সিরতা, চরঈশ্বরদিয়া, চরনিলক্ষিয়া, খাগড়হর, দাপুনিয়া, ঘাগড়া, ভাবখালী, বয়ড়া, বোরোরচর ইউনিয়নের সব কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২ টার মধ্যে আমাদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে প্রশাসনের সহায়তায় ভোট বাক্স ভর্তি করে ফেলে। ময়মনসিংহ-৩, গৌরীপুর আসন : নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বালিজুড়ি উচ্ছ বিদ্যালয়ে জনসভায় নৌকা প্রতীকের ভোটার ছাড়া অন্য ভোটারকে কেন্দ্রে যাওয়ার নিষেধ করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। ৩০ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টায় কাস্তে প্রতীকের এজেন্টের সাথে ব্যালট পেপারের হিসাব চাওয়া নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের কথা কাটাকটি হয়। প্রিজাইটিং অফিসার ব্যালট পেপারের হিসাব দিতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে জানা যায় রাতেই ১০টি বই-এ সিল দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরে দেয়া হয়। নির্বাচনের দিন সকাল ১০টার পর সকল কেন্দ্র থেকে নৌকা প্রতীক ছাড়া সকল প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট বের করে দেয়া হয়। ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে প্রশাসনের সহযোগিতায় ৫০% ব্যালট পেপার কেটে নৌকা মার্কায় সিল মেরে বাক্সে ভরে রাখা হয়। নির্বাচনের দিন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ-এর উদ্যোগে কেন্দ্রের বাইরে অহেতুক ঝগড়া লাগিয়ে উপস্থিত ভোটারদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে ভোট কেন্দ্র ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। ভোটাররা ভোট দিতে এসে ভোট দিতে পারে নাই। কোনো কেন্দ্রেই নির্বাচনী এজেন্টকে ব্যালট পেপারের হিসাব ও ব্যালট বাক্সের হিসাব দেয়া হয় নাই। সিধলা ইউনিয়নের ধীতপুর কেন্দ্রে গুলি করে ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ভোটারদের কেন্দ্র ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এরপর প্রশাসনের সহযোগিতায় নৌকার পক্ষে জাল ভোট প্রদান করা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে নৌকার প্রাপ্ত ভোটের ৫০% ভাগ ভোট প্রশাসনের সহযোগিতায় আগের রাতে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ভরে রাখা হয় এবং বাকি ৫০% ভোট প্রশাসন এবং প্রিসাইডিং অফিসারদের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের মাধ্যমে দেয়া হয়। ১৪টি ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় কেন্দ্রের সামনে কোনো ভোটার নেই। প্রিসাইডিং অফিসারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা বুথে বা প্রিসাইডিং অফিসার-এর রুমে নৌকা মার্কায় সিল মারতে দেখা যায়। প্রার্থীর নিজ কেন্দ্র হাসনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রার্থীর ভোট দেয়ার সময় ব্যালট পেপারের হিসাব দেখাতে বললেও, বলা হয় উপরের নির্দেশ আছে যে, হিসাব দেখানো যাবে না। বিকেল ৪টার ৫ মিনিটের আগে কাস্তে মাকার এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়। এরপর তাদের হিসাব মাফিক ভোটের ফলাফল দেয়া হয়।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..