দীর্ঘ হচ্ছে প্যারাডাইস পেপারের অভিযুক্ত তালিকা
একতা বিদেশ ডেস্ক :
‘প্যারাডাইস পেপার্স’ অর্থনৈতিক লেনদেন ও মালিকানা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যের কেলেঙ্কারী সংবলিত এক বিশাল ডাটাবেস। বিশ্বের ১৮০টি দেশের রাজনীতিক, সেলিব্রিটি ও বিত্তশালী মানুষের অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির তথ্য আছে এই ডাটাবেসে। যারা কর থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে বিনিয়োগ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ডাটাবেসের ১৩.৪ মিলিয়ন গোপন নথির প্রায় ৬.৮ মিলিয়ন এসেছে অফশোর আইনি সেবা সংস্থা অ্যাপলবাই এবং কর্পোরেট সেবা সংস্থা এস্টেরা থেকে। গত বছর এস্টেরা আলাদা হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান দু’টি একসঙ্গে অ্যাপলবাই (সারা বিশ্বে ১০ করপোরেট অফিস রয়েছে) নামে কর্মকাণ্ড চালাত।
অবশিষ্ট গোপন নথির তথ্য এসেছে ১৯৫০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ে ১৭টি ‘ট্যাক্স হেভেন’ নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান থেকে। এর বেশিরভাগই ক্যারিবিয়ান এবং আটলান্টিক দীপপুঞ্জ- অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, অরুবা, বাহামা, বার্বাডোস, বারমুডা, কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ, কুক দ্বীপপুঞ্জ, ডোমিনিকা, গ্রেনাডা, লাবুয়ান, লেবানন, মাল্টা, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, সেন্ট কিটস ও নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট, সামোয়া, ত্রিনিদাদ এবং টোবাগো এবং ভানুয়াতু।
গত বছরের ৩ এপ্রিল পানামা পেপার্স ফাঁস হওয়ার দেড় বছর পার হওয়ার আগে নতুন এই কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ায় শোরগোল পড়ে গেছে সারা বিশ্বে। পানামা পেপারসের মতো এবারও এসব নথি প্রথমে জার্মান দৈনিক সুইডয়চে জাইটংয়ের হাতে আসে। তবে সূত্রের নাম প্রকাশ করেনি গণমাধ্যমটি। পরে সেসব নথি তারা শেয়ার করে বিশ্বের ৯৬টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার সমন্বয়কারী মার্কিনভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) সঙ্গে। এসব গোপন নথির ১৩.৪ মিলিয়ন ডকুমেন্টস এখন তদন্ত করে দেখছে ৬৭টি দেশের ৩৮১ জন সাংবাদিক।
যুক্তরাজ্যের যুবরাজ চার্লসের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন অফশোর কোম্পানি ও তহবিলে মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করেছে। এভাবে বিনিয়োগের মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়ে বিপুল অঙ্কের মুনাফা কামিয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠান। বারমুডাভিত্তিক এসব অফশোর প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসার কয়েকটি পরিচালনার দায়িত্বে আছেন প্রিন্স অব ওয়েলসের ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধু।
ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা গেছে, ইংল্যান্ডের নরফোক এলাকার ১৬০০ হেক্টর (৩ হাজার ৪০০ একর) জমির মালিক ও কোটিপতি ঘোড়াখামারি হাগ ভ্যান কাটসেমের মাধ্যমে একটি অফশোর কোম্পানির সঙ্গে পরিচয় ঘটে চার্লসের প্রতিষ্ঠানের। কাটসেম ছিলেন ওই অফশোর কোম্পানির পরিচালক। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে চার্লসের সঙ্গে কাটসেমের পরিচয় ১৯৬০-এর দশকে। নিজ দেশে কোনো কর সুবিধা না থাকায় যুবরাজ চার্লসের প্রতিষ্ঠান তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কোম্পানিতে অর্থ খাটানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
ডাচ অব কর্নওয়েল একটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান। ১৩৩৭ সালে তৃতীয় এডওয়ার্ড এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল সন্তান ও উত্তরসূরি যুবরাজ এডওয়ার্ডকে স্বাধীন আর্থিক সক্ষমতা দেওয়া। ২৩টি দেশে ৫৩ হাজার হেক্টর জমির মালিক এই প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিকতম হিসাব অনুযায়ী এপ্রিলে এর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯১ কোটি ৩০ লাখ (৯১৩ মিলিয়ন) পাউন্ড।
কর ফাঁকি দিয়ে মুনাফা বাড়াতে অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের লোভ সামলায়নি যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো খ্যাতনামা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। ফাঁস হওয়া প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারির নথিপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নথিতে দেখা যায়, বিশ্বের নামকরা ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সব্রিজ কলেজগুলোর প্রায় অর্ধেকই গোপনে অফশোর তহবিলে কোটি কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে তেল অনুসন্ধান ও গভীর সমুদ্রে খননকাজের উন্নয়নে যৌথ উদ্যোগে নেওয়া একটি বিনিয়োগ প্রকল্পও রয়েছে। বিশ্বের অন্যতম করস্বর্গ বলে পরিচিত কেম্যান আইল্যান্ডে কয়েক শ’ কোটি ডলারের প্রাইভেট ইকুইটি পার্টনারশিপ ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণের বিনিয়োগ রয়েছে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। এই বিনিয়োগের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ‘ব্লকার’ বলে পরিচিত করপোরেশনগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যারভিত্তিক একটি তহবিলের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে করা হয় এসব বিনিয়োগ।
ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যায়, ২০০৬ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ফরাসি উপকূলের কাছের গার্নসে দ্বীপের ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানি ‘কোলার ইন্টারন্যাশনালে’ ৩৪ লাখ ডলার খাটিয়েছে। দুটি পৃথক তহবিলে এ অর্থ বিনিয়োগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তহবিলগুলোতে অর্থ আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের ও এর অধীন কলেজগুলো থেকে। একই প্রকল্পে ১৭ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন অফশোর কোম্পানিতে এভাবে নামীদামি দুই বিশ্ববিদ্যালয় বিনিয়োগ করায় তাদের নৈতিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ইউনিভার্সিটি অব এসেক্সের হিসাববিদ্যা বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রেম শিখা। তিনি বলেন, কেম্যানের সব প্রতিষ্ঠানই গোপনীয়তা ও কর ফাঁকির প্রস্তাব দেয়। এর বাইরে সেখানে কিছুই নেই। এটা এমন কোনো জায়গা না যেখানে বিজ্ঞান, গবেষণা বা জ্ঞান বাড়িয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সক্রিয় হওয়ার সুযোগ আছে।
আন্তর্জাতিক
গাজায় যেতে দিতে হবে ত্রাণ, ইসরায়েলকে নির্দেশ আন্তর্জাতিক আদালতের
যুদ্ধের মধ্যে জেলেনস্কির আয় বেড়ে তিনগুণ
এ বছরে ৮০ হাজারের বেশি সেনা হারিয়েছে ইউক্রেন : রাশিয়া
বন্দী বুশরা বিবিকে বিষ দেওয়া হয়েছে : ইমরান খান
মেয়াদ বাড়ল ভারতের মণিপুরে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী আইনের
সি-বাইডেন ফোনালাপ ফলপ্রসূ আলোচনার দাবি
জার্মানিতে ২০ হাজার হাতি পাঠানোর হুমকি বতসোয়ানার
তাইওয়ানে ভূমিকম্পের পর সুনামি সতর্কতা
পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বিমুখী আচরণের কঠোর সমালোচনা গায়ানার প্রেসিডেন্টের
৭ দিনের দুনিয়া
Login to comment..