২ সহযোগীসহ জঙ্গি মুফতি হান্নানের ফাঁসি

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
একতা প্রতিবেদক : জঙ্গি মুফতি হান্নান ও তার দুই সহযোগী শরীফ শাহেদুল ওরফে বিপুল এবং দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। গত ১২ এপ্রিল গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে মুফতি আবদুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল ওরফে বিপুলের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। একই দিন জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি কার্যকর করা হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। হান্নান ও তার দলের জঙ্গিরা ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ওই গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে। ওই ঘটনায় আনোয়ার চৌধুরী প্রাণে বেঁচে গেলেও দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজন নিহত হন। সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ৪০ জন আহত হন সেদিন। ওই হত্যাকাণ্ডের দায়ে হান্নান, বিপুল ও রিপনের মৃত্যুদণ্ডের রায় সর্বোচ্চ আদালতেও বহাল থাকে। সেই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন নাকচ করে আপিল বিভাগ বলে, তারা যে অপরাধ করেছে তা পূর্বপরিকল্পিত একটি অপরাধ। ব্রিটিশ কূটনীতিবিদ ও তার সফরসঙ্গীদের হত্যা করার জন্যই এ হামলা চালানো হয়েছিল। এ অভিযোগের দায় থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া যায় না। আদালতের ওই রায় এমন সময়ে কার্যকর হল, যখন বাংলাদেশের মানুষ বৈশাখ বরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল ওই বর্ষবরণের উৎসবেই রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় নিহত হন দশজন। সেই মামলাতেও নিম্ন আদালতে মুফতি হান্নানের ফাঁসির রায় এসেছে। রায়ের বিরুদ্ধে তার করা আপিলের ওপর শুনানি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে হাই কোর্টে। বলা হয়, বিশ শতকের শেষ বছর যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে হরকাতুল জিহাদের বোমা হামলার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার সূচনা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ হরকাতুল জিহাদের ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার পেছনে মূল ব্যক্তি হিসেবে মুফতি হান্নানকে দায়ী করা হয়। শেখ হাসিনার নিজের জেলা গোপালগঞ্জেই মুফতি হান্নানের বাড়ি। পাকিস্তানের মাদ্রাসায় পড়তে গিয়ে তার জঙ্গিবাদে হাতেখড়ি। আফগানিস্তান সীমান্তে যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তিনি আফগান স্টাইলে বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার তৎপরতা চালচ্ছিলেন। প্রথমে দেশি বোমা ব্যবহার করলেও পরে পাকিস্তান থেকে গ্রেনেড সংগ্রহ করেন। এছাড়া বোমা বানানো এবং আক্রমণ বিষয়েও তার সামরিক প্রশিক্ষণ আছে এবং এ নিয়ে প্রশিক্ষণও দিতেন তিনি। ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর ঢাকার বাড্ডা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৭ মামলার আসামি হান্নান ও তার সহযোগীদের মুক্ত করতে গত ৬ মার্চ টঙ্গীতে প্রিজন ভ্যানে হামলার ঘটনাও ঘটে। সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলায় তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় ২০০৪ সালের ২১ মে কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ৭ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, তার ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। যথাযথ ঠিকানা না থাকায় মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ ওরফে খাজার নাম প্রথমে বাদ দেওয়া হলেও পরে তাকে যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছর নভেম্বরে হয় অভিযোগ গঠন। ৫৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সামীম মো. আফজাল রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃতুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন) শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ। তাতে আসামিদের আপিল খারিজ হয়ে যায়, মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং দুইজনের যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল থাকে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..