সিপিবির নতুন সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন ও সা. সম্পাদক ক্বাফী রতন

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন
একতা প্রতিবেদক : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ত্রয়োদশ কংগ্রেস শেষে সিপিবির নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম সভায় কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দনকে সভাপতি ও আবদুল্লাহ ক্বাফী রতনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। নবনির্বাচিত সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দনের পৈত্রিক নিবাস নরসিংদীর মনোহরদীতে। তার বাবা অ্যাডভোকেট কাজী জহিরুল হক ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহকুমা পরবর্তীতে ঢাকা মহানগরী ন্যাপের সভাপতি। কাজী জহিরুল হক ও কাজী জাহান আরা বেগমের সন্তান সাজ্জাদ জহির চন্দন পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় স্কুল জীবনেই প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হন। পরবর্তীকালে ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। স্বৈরাচার বিরোধী ও ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী অন্যতম এই ছাত্রনেতা গত ২২ বছর ধরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সার্বক্ষণিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করা কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন ছাত্র রাজনীতি শেষ করেই যুক্ত হন কৃষক আন্দোলনে। কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কৃষক ও গ্রামের মেহনতি মানুষের নানা দাবি দাওয়া নিয়ে এলাকায় ও জাতীয় পর্যায়ে অসংখ্য আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। যাঁর অনেকগুলি ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে ১০ টাকায় কৃষকের ব্যাংক হিসাব খোলা, প্রতি বছর ধান, গম ইত্যাদি পণ্যের অতন্ত ১০ শতাংশ লাভে সরকারি ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়া বরেন্দ্র আন্দোলন, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০১৭ সালে যথাযথভাবে ও যথাসময়ে হাওরের নদীগুলিতে বাঁধ নির্মাণ না করায় কৃষকের ফসল ভেসে যায়। তারপর থেকে লাগাতার আন্দোলনের ফলে সরকার যথাসময়ে হাওরে বাঁধ নির্মাণ করতে বাধ্য হয়েছে। হাওর অঞ্চলের কৃষকের ফসল রক্ষা পেয়েছে। এ ছাড়াও তাঁর নেতৃত্বে কৃষক সমিতি সারাদেশে ইজারা প্রথা বাতিল, পল্লী বিদ্যুৎ ও ভূমি অফিসে দুর্নীতি, ইউনিয়ন পর্যায়ে খোদ কৃষকের থেকে ফসল ক্রয়ের জন্য ক্রয় কেন্দ্র খোলা, ডিজেল, বিদ্যুৎ, সারসহ কৃষি উপকরণের দাম কমানো ইত্যাদি নানা দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ২৪ এর ছাত্র-জনতার অভ্যুথানেও তিনি সামনের কাতারে দাঁড়িয়ে ভূমিকা রেখেছেন। কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন নিজের এলাকায়ও কৃষক ও মেহনতি মানুষের সব সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। তাঁর নেতৃত্বেই বেলাব-মনোহরদীতে সব্জি সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজের দাবিতে, থানা ভূমি অফিস ও হাসপাতালের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। বিশ্ব ছাত্র-যুব আন্দোলনের একজন কর্মী এবং পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেতা হিসেবে রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, গ্রিস, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, স্পেন, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপালের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন ত্রয়োদশ কংগ্রেসে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক, প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এদিকে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়ার আবদুল হান্নান ও নূরজাহান বেগমের সন্তান। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনা করেন সিলেট ক্যাডেট কলেজে। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কোর হায়ার কমসোমোল স্কুল থেকে সামজতত্ত্বে উচ্চতর ডিপ্লোমা গ্রহণ করেন। ১৯৯২ সালে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংকে যোগ দেন। ১৯৯৭ সালের জুন থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট

আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন
হিসাবে দায়িত্বপালনকালে তিনি স্বেচ্ছায় চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক জীবন গ্রহণ করেন। প্রায় ২২ বছরের ব্যাংকিং পেশায় তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দেশের বিভিন্ন জেলায় ও ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন ১৯৮৩ সালের স্বৈরাচার-সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সহকারী সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯-৯০ মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হল ছাত্র সংসদের প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। নব্বইয়ের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি দুই মেয়াদে সাত বছর বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৫ আসনে প্রার্থী ছিলেন। ত্রয়োদশ কংগ্রেসে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি ঢাকা মহানগর কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও নানা ধরনের সামাজিক সংগঠনের সাথেও যুক্ত রয়েছেন কাফী রতন। সিলেট ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠন ওল্ড ক্যাডেটস্ অ্যাসোসিয়েশান অব সিলেট (ওকাস)-এর দুই দফা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হল এ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাইয়ের জীবন সদস্য। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির জীবন সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট। ক্যাডেট কলেজ ক্লাবের সদস্য। শিদলাই বড়বাড়ী গার্লস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য ১৯৮৮ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে যান। ২০০০ সালে ফরাসী কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে অংশগ্রহণের জন্য ফ্রান্সে যান। সেসময় জার্মানির পার্টি অব ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিজম- পিডিএসের আমন্ত্রণে জার্মানি সফর করেন। ২০০৩ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই)-এর দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিতে সিপিবি’র তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে ভারত সফর করেন। ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ-এর কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যোগদানের জন্য তিনি বিভিন্ন সময় নেপাল, সাইপ্রাস, ভিয়েতনাম সফর করেন। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী প্রিটোরিয়ায় অনুষ্ঠিত ১৭তম বিশ্ব ছাত্র-যুব উৎসবে ৪৫ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ২০১১ ও ২০১২ সালে অল চায়না ইয়ুথ ফেডারেশানের আমন্ত্রণে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে চীন সফর করেন। ২০১৭ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে পুনরায় চীন সফর করেন। ২০২০ ও ২০২২ সালে জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে জার্মানি সফর করেন। ২০০১ সালে ব্যাংকিং বিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিতে সিঙ্গাপুর ও মালেয়েশিয়া সফর করেন। অন্যান্য: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হলের পক্ষে জাতীয় টেলিভশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। সাপ্তাহিক একতায় নানা বিষয়ে নিয়মিত লিখেন। একাধিক বই ও পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। তিনি অসংখ্যবার স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন। মরণোত্তর চক্ষু দানের অঙ্গীকারে আবদ্ধ। ব্যক্তি জীবনে তিনি দুই মেয়ের জনক, তার স্ত্রী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..