নাছোড় সংগ্রাম শেষে স্যামসাং শ্রমিকদের জয়

আর কারুমালাইয়ান

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

সারাবিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মেহনতিদের ওপর এবং শ্রমিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে আক্রমণ চলছে। শ্রমিকশ্রেণির এ যাবৎ অর্জিত অধিকারগুলি ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নানা অপচেষ্টায় শ্রমিক আন্দোলনকে ছিন্নভিন্ন-লণ্ডভণ্ড করে শ্রমিক সংগঠনকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছে পুঁজিবাদ। কিন্তু এতসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শ্রমিকরা রুখে দাড়াচ্ছে, সংগঠন গড়ছে, লড়াই করে বিজয় অর্জন করছে। সম্প্রতি সেই গৌরব অর্জন করা একটি লড়াইয়ের কাহিনী এই নিবন্ধটি বছরভর সুদীর্ঘ সাহসী সংগ্রামে জয় ছিনিয়ে আনলেন চেন্নাইয়ের শহরতলি শ্রিপেরুমবদুর প্ল্যান্টের স্যামসাং শ্রমিকরা। তীব্র ‘ইউনিয়ন-বিরোধী’ স্যামসাং কর্তৃপক্ষ শেষে চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য হয়। স্যামসাং শ্রমিকদের প্রত্যয়ী লড়াই শেষে এই তাৎপর্যপূর্ণ জয় ভারতের সমকালীন ট্রেড ইউনিয়ন সংগ্রামের ইতিহাসে এক মাইলফলক হয়ে থাকবে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট এবং বৃহত্তম পারিবারিক মালিকানাধীন বহুজাতিক সংস্থা স্যামসাং দুনিয়ায় ৭৫টি দেশে উৎপাদন চালায় এবং ‘ইউনিয়ন-বিরোধী’ কঠোর নীতির জন্য কুখ্যাত। কর্তৃপক্ষের এই শ্রমিক-বিরোধী ও গণতন্ত্র-বিরোধী নীতিকে সিআইটিইউ-র নেতৃত্বে ভারতীয় স্যামসাং শ্রমিকদের নাছোড় সংগ্রাম জানিয়েছে কড়া চ্যালেঞ্জ। সেইসঙ্গে, বাধ্য করেছে পিছু হটতে। দীর্ঘমেয়াদি এই সংগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হল ইউনিয়নের স্বীকৃতি। যদিও, চুক্তিতে উল্লেখযোগ্য মজুরি বৃদ্ধির কথাও আছে। তিন বছরে ১৮,০০০ টাকা থেকে ২৩,০০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি। সঙ্গে বিশেষ পদোন্নতি, বাড়তি ইনসেনটিভ, সবেতন ছুটির পরিমাণ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অতিরিক্ত সুবিধা। তবে, মূল দাবি ছিল ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার। এবং কর্তৃপক্ষের কাছে নিজেকে যৌথ দরকষাকষির স্বীকৃত প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এবং এই দাবি বর্তমানে সফলভাবে অর্জিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই বিজয়ের পথ মোটেই সহজ ছিল না। এই সংগ্রাম ছিল শ্রম ও পুঁজির মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব। যেখানে কেবল কর্পোরেট আগ্রাসনই নয়, জড়িত ছিল রাষ্ট্রযন্ত্রও। ২০২১ সালে স্যামসাংয়ের সিওল প্ল্যান্টে ইউনিয়ন গঠন ও সংহতির পর, ২০২৪ সালের ১৬ জুন একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত আসে– যখন ন্যাশনাল স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স ইউনিয়নের (এনএসইউ) প্রায় ৩০,০০০ শ্রমিক স্যামসাংয়ের ৮৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ধর্মঘটে শামিল হন। সেই একই দিনে, স্যামসাং ইন্ডিয়া ইলেকট্রনিক্স প্রাইভেট লিমিটেড-এর শ্রিপেরুমবদুর ইউনিটের শ্রমিকরা কাঞ্চিপুরমে এক সাধারণ সভায় মিলিত হন। এর আগে ইউনিয়ন গঠনের একাধিক ব্যর্থ চেষ্টার পর, এবার তাঁরা সফল হন– আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় স্যামসাং ইন্ডিয়া তোজিলার সংঘম (স্যামসাং ইন্ডিয়া ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, এসআইডব্লিউইউ)। ‎পরের দিনই, ২৭ জুন ২০২৪, স্যামসাং ইন্ডিয়া ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (এসআইডব্লিউইউ)-এর সাধারণ সভায় নির্বাচিত পদাধিকারীদের তালিকা স্যামসাং কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়। নির্বাচিত নেতৃত্ব শ্রমিকদের দাবিসমূহকে পরিমার্জিত করে একটি আনুষ্ঠানিক দাবিসনদ প্রস্তুত করেন। এবং দ্রুত সমাধানের আবেদনসহ তা কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করেন। তবে স্যামসাং কর্তৃপক্ষ তাদের চিরাচরিত চরিত্র অনুযায়ী কোনরকম আলোচনায় না গিয়ে একের পর এক অন্যায্য শ্রম-বিরোধী কার্যকলাপের আশ্রয় নেয়। কর্তৃপক্ষের লোকজন ভাড়াটে গুন্ডাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রমিকদের বাড়িতে গিয়ে ভয় দেখিয়ে ‘রাজি করানোর’ চেষ্টা করে যাতে তারা ইউনিয়ন ছেড়ে দেয়। এমনকি মানতে রাজি না হলে ছাঁটাইয়ের হুমকিও দেওয়া হয়। এই চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে, প্রতিটি শিফটের পর কর্তৃপক্ষের বড় কর্তারা শ্রমিকদের আলাদাভাবে ডেকে ইউনিয়ন ছাড়ার জন্য চাপ দিতে শুরু করে। একইসঙ্গে, তারা ঘোষণা করে যে কোনও ‘বহিরাগতের’ সঙ্গে তারা কখনোই কথা বলবে না। এবং এমন কেউ যেন কারখানায় প্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। এরপর কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের একটি তথাকথিত ‘সভা’র জন্য ডেকে পাঠায়। বরং বলা চলে, কার্যত শ্রমিকদের প্যারেড করানো হয়। এসআইডব্লিউইউ-তে যুক্ত ১,৫৫০ জন শ্রমিক এই সভা বয়কট করেন। ইউনিয়নকে দুর্বল করার এক সুস্পষ্ট অপচেষ্টায় কোম্পানি একটি কর্তৃপক্ষের দালাল ‘ওয়ার্কমেন্স কমিটি’ গঠন করে এবং শ্রমিকদের জোর করে এমন নথিপত্রে স্বাক্ষর করাতে চায়, যা প্রমাণ করবে যে তারা ওই দালাল কমিটিতে যোগ দিয়েছে। কিন্তু এই ভয়ভীতি উপেক্ষা করে শ্রমিকরা দৃঢ়তা বজায় রাখে ও আত্মসমর্পণকে অস্বীকার করে। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয় যখন এসআইডব্লিউইউ-এর এক পদাধিকারীকে অপহরণ করে আটকে রাখে কর্তৃপক্ষ। তবুও শ্রমিকরা পিছু না হটে এবং এই অপরাধমূলক হামলার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার শপথ নেয়। এই গভীর সঙ্কটের মধ্যে এসআইডব্লিউইউ ১৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে ধর্মঘটের নোটিশ দেয়। এই সাহসী প্রতিরোধনামার জবাবে স্যামসাং ভাড়াটে গুন্ডাদের দিয়ে ইউনিয়ন নেতাদের খুনের হুমকি দেয়। যখন ইউনিয়ন নেতৃত্ব পুলিশের কাছে সুরক্ষার দাবি নিয়ে যান, তখন তাঁদের আমল না দিয়ে বরং থানায় আটক করা হয়। যা কর্পোরেট শক্তি ও রাষ্ট্রযন্ত্রের অশুভ যোগসাজশকে আরো বেআব্রু করে তোলে। এইভাবে, শ্রমিকরা দ্বিমুখী আক্রমণের মুখোমুখি হয়– একদিকে কর্তৃপক্ষের নির্মম ও ইউনিয়নবিরোধী আচরণ, আর অন্যদিকে পুলিশে থেকে শুরু করে রাজস্ব দফতর পর্যন্ত সরকারের নির্লজ্জ দালালির ভূমিকা। কর্পোরেটের সেবাদাস শাসনযন্ত্রের সামনে, এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শ্রমিকশ্রেণির আর কোনও পথ খোলা ছিল না– তারা বাধ্য হন সরাসরি প্রতিরোধের চূড়ান্ত অস্ত্র, অর্থাৎ উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে ধর্মঘটের পথে যেতে। এই অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘট শুরু হয় ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে। এক মাসব্যাপী ধর্মঘটের পর, ১৫ অক্টোবর ২০২৪-এ, তামিলনাডু রাজ্য সরকারের চার-সদস্যের মন্ত্রিগোষ্ঠী মধ্যস্থতা করে এবং রাজ্য শ্রমদপ্তরের প্রস্তাবিত ‘মীমাংসা পরামর্শ’-এর ভিত্তিতে উভয় পক্ষ একমত হয়। যেহেতু ইউনিয়নের নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলা মাদ্রাজ হাইকোর্টে বিচারাধীন ছিল, তাই তামিলনাডু সরকার, আদালতের রায় অনুসরণ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। দাবিপত্র প্রসঙ্গে, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিযুক্ত মীমাংসা প্রতিনিধিদের কাছে লিখিতভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে এবং আইনসম্মত প্রক্রিয়া মেনে সমাধানের পথে এগোতে সম্মত হয়। সেইসঙ্গে, এই ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করার কারণে কোনও শ্রমিকের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না– একথাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। এরপর, একটি বিশেষ সাধারণ সভায় সর্বসম্মত প্রস্তাবের ভিত্তিতে ৩৮ দিনব্যাপী অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘট ১৬ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে প্রত্যাহার করা হয়। ১৭ জানুয়ারির সকালে শ্রমিকেরা আশা নিয়ে প্ল্যান্টে ফিরে আসেন, কাজে ফেরার প্রস্তুতি নিয়ে। কিন্তু স্বাভাবিক উৎপাদন শুরু হয়নি। বরং, প্রায় ১,৫০০ শ্রমিককে ১৫০ জন করে দশটি দলে ভাগ করে এক সপ্তাহব্যাপী ‘প্রশিক্ষণ’ বা ‘পুনঃঅভিমুখীকরণ’ কর্মসূচিতে শামিল করা হয়। এই সেশনগুলো কোনওভাবেই শিক্ষামূলক ছিল না– বরং ছিল চাপ সৃষ্টি, মানসিক নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণে পরিপূর্ণ– যার লক্ষ্য ছিল স্পষ্টভাবে শ্রমিকদের মগজধোলাই করা। শ্রমিকদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে, স্যামসাং কর্তৃপক্ষ কর্পোরেটপন্থী দালাল ইউনিয়নে যোগদানে ইচ্ছুকদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা ঘোষণা করে– শ্রমিকদের আর্থিক দুরবস্থাকে পুঁজি করে। বিপরীতে, এসআইডব্লিউইউ-এর সদস্যদের ন্যায্য প্রাপ্য ও ছুটির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। এমনকি মহিলা শ্রমিকরাও রেহাই পাননি– তাঁদের এমন শারীরিকভাবে কঠিন কাজে স্থানান্তর করা হয়, যা সুস্পষ্টভাবে হয়রানিমূলক। এই সময়েই, মাদ্রাজ হাইকোর্ট স্যামসাং ইন্ডিয়া ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (এসআইডব্লিউইউ)-এর নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশান) করার নির্দেশ দেয়। ৩৮ দিনের ধর্মঘট, দীর্ঘ নিপীড়ন এবং ২১২ দিন ধরে চলা আইনি লড়াই শেষে, এসআইডব্লিউইউ আনুষ্ঠানিকভাবে ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়। এই প্রাপ্তি এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। বিশেষত সেই প্রেক্ষাপটে যখন দেশে সর্বত্র নয়া উদার নীতির প্রভাবে ‘ইউনিয়ন-শূণ্য’ কর্মস্থল গড়ে তোলার অপচেষ্টা ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। তবে এই জয়ের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ কর্তৃপক্ষ আরও এক দফা প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপে নামে, আর এসআইডব্লিউইউ-এর নেতৃত্বে শ্রমিকরা নতুন করে প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে শ্রমিকরা একযোগে মিছিল করে কর্তৃপক্ষের ডিরেক্টর এর সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু তিনি তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকার করেন। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা কারখানার ভিতরে বসে ধর্মঘট শুরু করেন। যা চলে টানা ১১ দিন ধরে, ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। শ্রমিকদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্যে শৌচাগারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আন্দোলনরত শ্রমিকরা অবিচল থাকেন। পুলিশকে কারখানায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। কারণ একদিকে উৎপাদন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল, আর অন্যদিকে ভেতরের পরিবেশ ছিল উত্তপ্ত। শ্রমিকরা এমনকি ঘোষণা করে যে যদি লাঠিচার্জ-ও হয়, তাহলে তাঁরা যন্ত্রপাতিকে আঁকড়ে ধরবেন আত্মরক্ষার্থে। এই অবস্থায় স্যামসাং কর্তৃপক্ষ প্রায় ২,৫০০ লোডিং কর্মী এনে ধর্মঘট ভাঙার চেষ্টা করে। এই বেআইনি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সিআইটিইউ ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টরেটের কাছে হস্তক্ষেপের আবেদন জানালেও, কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং চাপে ফেলে এসআইডব্লিউইউ সদস্যদের পদত্যাগ করিয়ে কর্তৃপক্ষের দালাল ‘ওয়ার্কমেন্স কমিটি’-তে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ বাড়ানো হয়। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এসআইডব্লিউইউ কারখানার বাইরে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন। কিন্তু জেলাপ্রশাসন আন্দোলনের জন্য কোথাও জমায়েতের অনুমতি দিতে নারাজ। কিন্তু এতে দমে না গিয়ে শ্রমিকরা সিপিআই(এম)-এর হাতে থাকা একটি জমিতে, যা কারখানা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে, অস্থায়ী ছাউনি গড়ে তোলেন। এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। এই সময়ে, আগ্রাসী মনোভাবে স্যামসাং কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক শ্রমিককে চাপ দিয়ে একটি গোপন ১৮(১) ধারা অনুযায়ী চুক্তিতে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। যা করা হয় সংখ্যালঘু কর্তৃপক্ষের দালাল ‘ওয়ার্কমেন্স কমিটি’-র সঙ্গে। এই চুক্তিগুলোতে সামান্য কিছু সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হলেও, প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল আন্দোলনরত শ্রমিকদের মনোবল ভেঙে ফেলা। কিন্তু শ্রমিকরা তাতেও নতি স্বীকার করেননি। তাঁরা নিজেদের বৈধ দাবিসমূহ নিয়ে এসআইডব্লিউইউ-এর সঙ্গে সরাসরি আলোচনার দাবি অব্যাহত রাখেন। ৭ মার্চ শ্রমিকরা কারখানার মূল ফটকে মিছিল করে পৌঁছন। এবং কাজে ফিরতে দেওয়ার দাবি জানান। ধাপে ধাপে শ্রমিকদের পুনরায় কাজে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। যা এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ৯ মে পর্যন্ত চলতে থাকে। এই সময়ে ২৫ জন ইউনিয়ন পদাধিকারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তবুও শ্রমিকদের আন্দোলন থেমে থাকেনি। এই সময়কালে ২০টিরও অধিক মধ্যস্থতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অবশেষে, ১৯ মে ২০২৫ তারিখে তামিলনাডু রাজ্যের শ্রমমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে মজুরি বৃদ্ধিসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দাবিদাওয়া বিবেচনায় নেওয়া হয়। চুক্তিতে উভয় পক্ষ স্যামসাং কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠন স্বাক্ষর করে। এসআইডব্লিউইউ-র নেতৃবৃন্দ, যার মধ্যে ছিলেন সিআইটিইউ-এর রাজ্য সভাপতি এ সৌন্দর্যরাজন এবং অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ই মুত্থুকুমার, চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির মাধ্যমে ইউনিয়নটি কেবলমাত্র সরকারিভাবে নিবন্ধিত নয়, বরং একটি বৈধ ও স্বীকৃত যৌথ দরকষাকষির সংগঠন হিসেবেও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করে। এই জয় শ্রমিকদের এক অবিচ্ছেদ্য অধিকার। যা শ্রীপেরুম্বুদুর এর স্যামসাং কারখানার শ্রমিকদের সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং ধারাবাহিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে। এই আন্দোলন শ্রমজীবী জনগণের অধিকার রক্ষার সংগ্রামে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেবে। নয়া উদারবাদী ভারতের প্রেক্ষাপটে যখন শ্রমিক অধিকার বারংবার হরণ করা হচ্ছে এবং সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা চলছে, ঠিক সেই প্রেক্ষাপটে স্যামসাং-এর শ্রমিকরা যে সংগ্রামী ঐক্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে দেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সৌজন্যে : মার্কসবাদী পথ ভাষান্তর: স্বাতী শীল

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..