‘এখনও গেল না আঁধার’
না, এবারও কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে ভাল কোনও ব্যবস্থাপনা দেখল না দেশ। হাজার হাজার গরুর চামড়া মানুষ রাস্তায় ফেলে গেছে, ক্রেতার অভাবে। যারা বিক্রি করেছেন তারাও ন্যায্যমূল্য পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন। আর ছাগলের চামড়ার ব্যাপারে কোনও কথাই নেই। বিনামূল্যে অনেকেই ছাগলের চামড়া দিয়ে দিয়েছেন। বা ফেলে দিয়েছেন।
সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা যদিও বলেছেন, গত এক দশকের মধ্যে নাকি মানুষ গরুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য পেয়েছে। যদিও এর সঙ্গে বাস্তবের মিল খোঁজে পাচ্ছেন না চামড়া সংগ্রহকারী মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
বরাবরের মত এবারও কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম ঠিক করে দেয় সরকার। গত বছরের তুলনায় এবার দাম বাড়িয়েছিল সরকার। বলা হয়েছিল, ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। গত বছর এই দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা; যা গতবছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
এ ছাড়া সারাদেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হবে ট্যানারিতে। গত বছর এটা ছিল ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। আর বকরির চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম ২০ থেকে ২২ টাকা; যা গতবার ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম বড় চামড়ার বাজার দিনাজপুরের রামনগর বাজার। সেখানে ‘সঠিক দাম’ না পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
প্রায় একই কথা বরেছেন চট্টগ্রামের মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও। তাদের ভাষ্য ছিল এরকম, আড়তদারদের সঙ্গে ‘সিন্ডিকেট’ করে কিছু লোক অল্প দামে চামড়া কিনছে। ৭০০/৮০০ টাকায় তারা চামড়া কিনে আনলেও সেগুলো দর করা হচ্ছে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
অনেকেই অভিযোগ করেছেন, এটা বরাবরের মতই আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে এমনটা হয়েছে। চামড়ার দাম কমার পেছনে এই ‘সিন্ডিকেটের’ ভূমিকা কী, সেটা খতিয়ে দেখা উচিত।
তবে সংশ্লিষ্টরা সবসময়ই বলে আসছেন, কাঁচা চামড়ার দাম না বাড়ার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, এই শিল্পের পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স সমস্যা। বাংলাদেশ এই দীর্ঘ সময়েও ইউরোপের লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) সনদ অর্জন করতে পারেনি। ফলে ইউরোপের বদলে চীনের বাজারে কম দামে চামড়া রপ্তানি করতে হয়। যদি চামড়া রপ্তানির জন্য নতুন বাজারের যোগান না পাওয়া যায় তাহলে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠা কঠিন হবে।
এ ছাড়া সরকারকে অবশ্যই চামড়ার সঠিক মূল্য নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু কাগজ-কলমে দাম নির্ধারণ করলেই হবে না, এর বাস্তব প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। ট্যানারি মালিকদের দায়বদ্ধতার আওতায় আনা, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়া রপ্তানির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা-এসব বিষয়ে সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকা জরুরি। অন্যথায় প্রতিবছর কোরবানিদাতাদের এই হতাশাজনক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে না এবং দেশের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প খাত মুখ থুবড়ে পড়বে।
সম্পাদকীয়
এই ‘আত্মঘাতী প্রবণতা’ কে থামাবে
Login to comment..