মানুষ চায় দ্রুত নির্বাচন

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘হানিমুন পিরিয়ড’ আগেই শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে এক এক করে পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো জনগণের সামনে সরকারের মনোভাব পরিষ্কার নয়। এই সরকার কী করতে চায়, নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাবনা কী, গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কাজ কতদূর এগোলো, এগুলো শেষ হতে আরো কত সময় লাগতে পারে, শেষ পর্যন্ত এই সংস্কার কার্যক্রম শেষ হবে কি না, জাতীয় ঐক্য কোন পথে–এ ধরনের বহুবিধ প্রশ্ন এখন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সময় যত যাচ্ছে মানুষের মধ্যে অনিশ্চয়তা, সংশয় ও সন্দেহ গাঢ় হচ্ছে। সম্প্রতি একটি ইংরেজি দৈনিকে দীর্ঘ সাক্ষৎকার দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে তিনি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন প্রক্রিয়া, সেখানে তার প্রভাবের ধরন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক এবং সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলেছেন। সেই সাক্ষাৎকারে নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গও উঠে আসে। তবে যে বিষয়টি বারবারই উঠে এসেছে সেটি হলো- ড. ইউনূস বলতে চাচ্ছেন, তিনি কিংবা তার উপদেষ্টা পরিষদ রাষ্ট্র পরিচালনায় তেমন অভিজ্ঞ নন, এটি রাজনীতিবিদদের কাজ, তারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দায়িত্ব নিয়েছেন, এবং দেশের বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছেন। তার সরকার চেষ্টা করছে ভালো কিছু করার। যদি সেটি হয়ে যায় তবে ভালো, আর চেষ্টা ব্যর্থ হলে দেশের মানুষের কপাল খারাপ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের এসব বক্তব্যকে বিভিন্ন মহল ‘অর্বাচীন মতো কথাবার্তা’ বলে মন্তব্য করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দিতে পারেনি। এ নিয়ে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ রয়েছে। শিক্ষার্থীরাও বছরের শুরুতে নতুন বই হাতে স্কুলে যাওয়ার যে আনন্দ বা আগ্রহ সেটি থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। খোদ শিক্ষা উপদেষ্টা তো বলেই দিয়েছেন, সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া ও বই ছাপানো একটা ‘যুদ্ধের মতোই বিষয়’। বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ে কোনো সুখবর নেই। সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না। আমনের মৌসুম শেষেও চালের দাম কমছে না। বরং ভোগ্যপণ্য নিয়ে অস্বস্তি বাড়ছেই। পাঁচ মাসেও দেশের মানুষের মধ্যে বাজারদর নিয়ে আস্থা ফেরাতে পারেনি সরকার। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে নির্বাচন কবে হবে, মানুষ কবে নিবিঘ্ন তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে, কবে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার আসবে, এই প্রশ্নগুলোই এখন সরকারের সামনে সবচেয়ে প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে। কিন্তু সরকার বিভিন্ন সময় ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা বললেও সরাসরি কিছু বলছে না। এর ফলে জনগণের মধ্যে একটি আশঙ্কা উঁকি দিচ্ছে। সেটি হলো- সরকার কি নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের পেছনে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে? রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিয়ে যেন একটি নতুন রাজনৈতিক দল জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারে, সরকার কি সেদিকেই বেশি মনোযোগী? ড. ইউনূসের সরকার কি নির্বাচন প্রলম্বিত করতে চায়? এই সরকার কি ছলে-বলে-কৌশলে নতুন কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতার কাছাকাছি আনতে চায়? সেজন্যই কি নির্বাচন নিয়ে এত ধোঁয়াশা! জনগণ অবশ্য এসব শুনতে ও বুঝতে নারাজ। তারা চায় দেশে দ্রুত একটি নির্বাচন হোক। সেই নির্বাচনে মানুষ ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করুক। সর্বোপরি মানুষ চায় নির্বাচিত ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হবে জনগণের সেই মনোভাবকে পাঠ করা। জনআকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনের পথে দেশকে এগিয়ে নেওয়া। আর তাতেই দেশ ও মানুষের মঙ্গল নিহিত।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..