মালয়েশিয়ায় যারা সেকেন্ড হোম করে আছেন তারা বৈধভাবে অর্থ নেননি : বাংলাদেশ ব্যাংক

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
একতা প্রতিবেদক : মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের মালিকদের মধ্যে বাংলাদেশীদের অবস্থান এখন চতুর্থ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, মালয়েশিয়ার দেয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের বৈধ-অবৈধ অর্থ সেখানে পাচার হচ্ছে। আবার কেউ কেউ তৃতীয় দেশে অর্থ পাচারের জন্য মালয়েশিয়াকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। মালয়েশিয়ায় তিন হাজার ৬০৪ জন বাংলাদেশী সেকন্ড হোম তৈরি করেছেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশীদের এই সংখ্যা ছিল ১৫০ জন। মাত্র চার বছরে এই সংখ্যা বেড়েছে ২৪ গুণ। আর এই সেকেন্ড হোম করতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মালয়েশিয়ার ব্যাংকে জমা রাখতে হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ‘তারা বৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে অর্থ নেননি।’ মালয়েশিয়া আরো আগ্রাসীভাবে এই প্রক্রিয়া চালাতে এখন সেকেন্ড হোম করার শর্ত আরো সহজ করেছে। প্ল্যাটিনাম, গোল্ড ও সিলভার এই তিন ভাগে আবেদনকারীদের ভাগ করা হয়। প্ল্যাটিনাম স্তরের আওতায় অংশগ্রহণকারীদের অবশ্যই ৫০ লাখ রিঙ্গিত (১ রিঙ্গিত=২৭ টাকা), গোল্ড স্তরের ২০ লাখ এবং সিলভার স্তরের অংশগ্রহণকারীদের পাঁচ লাখের একটি স্থায়ী আমানত থাকতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচিত সব স্তরের অংশগ্রহণকারীদের অবশ্যই বার্ষিক মোট ৬০ দিন মালয়েশিয়ায় বসবাসের ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য অভিবাসন বিভাগের সাথেও কাজ করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সব ফরম পূরণ করার পর নিরাপত্তা অনুসারে আবেদনকারী যোগ্য কি না, তা তিন কার্যদিবসের মধ্যেই যাচাই করা হবে। সংশোধিত শর্ত অনুযায়ী, আবেদনকারীরা ১০ বছরের আগে তাদের সম্পত্তি পুনরায় বিক্রি করতে পারবেন না এবং তাদের ভিসা প্রতি পাঁচ বছর পর পর নবায়ন করতে হবে। দেশটির সরকার আবেদনকারীদের সন্তানের জন্য পছন্দের স্কুল বেছে নেয়ার সুবিধা দেবে। গত ২৯ মার্চ মালয়েশিয়ার পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতি মন্ত্রী টিয়ং কিং সিং এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দেশটিতে গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৬৬ জন সক্রিয় সেকেন্ড হোম পাস হোল্ডার রয়েছেন। তালিকায় ২৪ হাজার ৭৬৫ জন পাসধারী নিয়ে শীর্ষে রয়েছে চীন। এরপরে যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়ার চার হাজার ৯৪০ জন, জাপানের চার হাজার ৭৩৩ জন, বাংলাদেশের তিন হাজার ৬০৪ জন, যুক্তরাজ্যের দুই হাজার ২৩৪ জন, তাইওয়ানের এক হাজার ৬১১ জন ও যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজার ৩৪০ জন রয়েছেন। এছাড়া সিঙ্গাপুরের রয়েছেন এক হাজার ২৮২ জন, ভারতের এক হাজার ২২৩ জন এবং অস্ট্রেলিয়ার এক হাজার ৬৯ জন। মালয়েশিয়া ‘মাই সেকেন্ড হোম’ প্রোগ্রামে ২০১৮ সালে পাঁচ হাজার ৬১০টি এবং ২০১৯ সালে তিন হাজার ৯২৯টি আবেদন অনুমোদন দেয়। প্রোগ্রামটি ২০২০ সালের আগস্টে সাময়িক বন্ধ ছিল। এরপর ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে প্রায় এক হাজার ৪৬৮টি আবেদন অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। ‘সেকেন্ড হোম’ ক্যাটাগরির নানা আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে ২০২২ সালের অক্টোবরে মালয়েশিয়া সরকার নতুন করে মালয়েশিয়াজ প্রিমিয়ার ভিসা প্রোগ্রাম (পিভিআইপি) নামে প্রিমিয়াম ভিসা চালু করে। যেটি প্রায় সেকেন্ড হোম ক্যাটাগরির। পিভিআইপি প্রোগ্রামে আবেদন করেছেন মোট ৪৭ জন বিদেশি ধনী বিনিয়োগকারী, যাদের মধ্যেও একজন বাংলাদেশী আছেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের সেকেন্ড হোমধারীরা যদি গড়ে ১০ হাজার কোটি টাকাও পাচার করে থাকেন তাহলে তার মোট পরিমাণ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবে এর পরিমাণ আরো বহুগুণ বেশি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের নামে বাংলাদেশ থেকে দুইভাবে অর্থ পাচার হচ্ছে। প্রথম আমদানি রফতানির নামে ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে। আর সরাসরি হুন্ডির মাধ্যমেও অর্থ পাচার হচ্ছে। আর এই অর্থের বড় একটি অংশ অবৈধ আয়। ঘুস, দুর্নীতি, প্রতারণা ও মাদককারবারসহ অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে এই অর্থ আয় হচ্ছে।’ লাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: মেজবাউল হক বলেন, ‘মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোমের জন্য সেখানে অর্থ পাঠানোর কোনো অনুমোদন বাংলাদেশ ব্যাংক দেয়নি। বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে ওই অর্থ যায়নি। ওই অর্থ সেখানে কীভাবে গেল সেটা বিএফআইইউ এবং এনবিআর তদন্ত করে দেখতে পারে।’ এদিকে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম বলেন, ‘সেকেন্ড হোমের নামে মালয়েশিয়ায় যে অর্থ পাচার হয়েছে সেটা নিয়ে দুদকের সরাসরি কাজ করার কোনো সুযোগ নাই। যদি বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য কোনো সংস্থা আমাদের তালিকা দেয়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেয় তাহলে দুদক কাজ শুরু করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেলে দেশে মানি লন্ডারিং আইন আছে, আন্তর্জাতিক আইন আছে। সেই আইনেই আমরা কাজ শুরু করতে পারি।’ বাংলাদেশের কারা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়েছে তা জানতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছিল কয়েক বছর আগে। কিন্তু তাতে কোনো ফল আসেনি।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..