মানবমুক্তির সংগ্রামে তিনি ছিলেন অবিচল
কমরেড হেনা দাসের জন্মশতবর্ষ
একতা প্রতিবেদক :
আজীবন বিপ্লবী, ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামী, শ্রমিক-শিক্ষক-নারী আন্দোলনের অন্যতম নেতা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাবেক সভানেত্রী কমরেড হেনা দাসের শততম জন্মদিন উপলক্ষে গত ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টায় সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান নেতৃবৃন্দ।
পুষ্পমাল্য অর্পণের সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, কোষাধ্যক্ষ ডা. ফজলুর রহমান, সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, জলি তালুকদার, কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক জাহিদ হোসেন খান প্রমুখ।
পুষ্পমাল্য অর্পণের সময় কমরেড হেনা দাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, কমরেড হেনা দাস আজীবন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির লড়াই করে গেছেন। তিনি মানবমুক্তির মহান সংগ্রামে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অবিচল ছিলেন। মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ তথা সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার মহান ব্রত নিয়ে মাত্র ১৪ বছর বয়সে কমরেড হেনা দাস সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসন-শোষণের শৃঙ্খল ছিন্ন করে দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। বঞ্চিত নিপীড়িত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রসৈনিক।
নারায়ণগঞ্জ : কমরেড হেনা দাসের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় নারায়ণগঞ্জ মহাশ্মশানে সিপিবি নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির উদ্যোগে শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিবি নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম। এসময় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি কমরেড শাহ আলম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল কাফী রতন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাড. মন্টু ঘোষ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জেলা সভাপতি লক্ষ্মী চক্রবর্তী, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের জেলা সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দাস প্রমুখ।
কমরেড হেনা দাসের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটি, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি, নারায়ণগঞ্জ শহর কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি, সমমনা, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, খেলাঘর, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্র, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও কমরেড হেনা দাসের পরিবারবর্গ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কমরেড হেনা দাস বৃহত্তর সিলেট জেলার মেয়ে। জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ শহরে। তিনি ছিলেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। মৃত্যুকালে মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন। শিক্ষক আন্দোলনেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। জীবনে বহুমাত্রিক লড়াই-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন।
নারী নেত্রী হেনা দাস ১৯২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সিলেট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানায়। তিনি ছিলেন লাখাই ঐতিহাসিক দত্ত পরিবারের মেয়ে। তাঁর পিতা ছিলেন রায় বাহাদুর অ্যাড. সতীশ চন্দ্র দত্ত এবং মাতা ছিলেন মনোরমা দত্ত। মনোরমা দত্ত ছিলেন চুনারুঘাট থানার নরপতি গ্রামের জমিদার জগৎ চন্দ্র বিশ্বাসের মেয়ে। হেনা দাসের পিতা রায় বাহাদুর অ্যাড. সতীশ চন্দ্র দত্ত ১৯৩০ সালে হবিগঞ্জ সদর-লাখাই-বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ আসন থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। কিছুদিন স্পীকারের দায়িত্ব পালন করেন।
হেনা দাস অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে সিলেটে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ছোটবেলা হতেই হেনা দাস প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ ছিলেন। হেনা দাস গণনাট্য সংঘের একজন শিল্পী ছিলেন। তিনি ছিলেন হেমাঙ্গ বিশ্বাসের অন্যতম সহযোগী। গান গাইতেন, নাটক করতেন এবং একজন ভালো নিত্যশিল্পীও ছিলেন। তিনি ছিলেন গণনাট্য সংঘের সামনের সারির একজন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মে মাসে ৪০০ জনের একটি দল নিয়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে লঞ্চে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় যান। তারপর ২৫/৩০ মাইল পায়ে হেটে প্রথমে ভারতের আগরতলা যান। তারপর কলকাতায় চলে যান। কলকাতায় পার্ক সার্কাস লেনে কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্র স্থাপন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন শরণার্থী শিবিরের বিদ্যালয় প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় শিক্ষক সমিতি বিদেশি সহায়তা পান। তিনি এই সাহায্য দিয়ে শরণার্থী শিবিরে ৫০টি বিদ্যালয় খোলেন। শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া শিক্ষকদেরকে এসব বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় নারী ও শিশুদের পোশাক এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যাদি সংগ্রহ করে বিতরণ করতেন। শিশুদের পড়াশুনার জন্য অনেক ভূমিকা রাখেন।
১৯৯৬ সালে শিক্ষা সংগ্রামের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়। সেই কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন হেনা দাস। কমিশনে কাজ করেছেন দিনরাত। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র হিসেবে প্রকাশিত হয় গণশিক্ষা যার সম্পাদক ছিলেন হেনা দাস।
২০০৯ সালের ২০ জুলাই এই মহিয়সী নারী পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জনগণ তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। এরপর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। নারায়ণগঞ্জ মহাশ্মশানে তার স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়।
উল্লেখ্য, কমরেড হেনা দাসের শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে দেশব্যপী বছরজুড়ে নানান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সিপিবি।
প্রথম পাতা
দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও ব্যর্থ হচ্ছে
নারীর জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণে সংগ্রাম জোরদার করুন
কমরেড লাকী আক্তারের বিরুদ্ধে মব সন্ত্রাস বন্ধের আহ্বান সিপিবির
গণতন্ত্র রক্ষায় বাম-প্রগতিশীলদের ঐক্যের বিকল্প নাই
‘ছায়া’
হামলা-মামলার বিরুদ্ধে ময়মনসিংহে বামজোটের বিক্ষোভ সমাবেশ
খুন-ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের আহ্বান
ধর্ষণ-নিপীড়নকারী ও মব সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার কর
বাঁওড় ইজারা বাতিল ও জেলেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ
সয়াবিনের সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও ঊধ্বমুখি দাম অনেক পণ্যে
শ্রেণিদৃষ্টিতে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের চিত্তভূমি
Login to comment..