একতা বিদেশ ডেস্ক :
বামপন্থাতেই অনড় রইল ভেনেজুয়েলা। ২৩টির মধ্যে ২০টি প্রদেশের রাজ্যপাল ও মেয়র নির্বাচনের ভোটে জয়ী সাভিস্তারাই। একাধিক সংবাদ সংস্থা ও নিউজ পোর্টাল সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সূত্রে এই খবর পাওয়া গিয়েছে। ২১ নভেম্বর দেশটিতে ভোট হয়েছিল।
এবার নির্বাচনে প্রধান বিরোধী জোট ছিল ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক টেবিল (এমইউডি), যাদের পিছনে ওয়াশিংটনের কূটকৌশল বিতর্কের ঊর্ধ্বে। স্বভাবতই নির্বাচন ঘিরে ছিল টানটান উত্তেজনা। মার্কিন অবরোধের পরিণতিতে প্রাত্যহিক জীবনযন্ত্রণার আবহেই এই নির্বাচন হয়েছে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহও চোখে পড়েছে। বাস্তবে তা পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে বড় শিক্ষা এবং বলেভারিও বিপ্লবের প্রতি দেশবাসীর স্পষ্ট সমর্থন। ২১ নভেম্বরই সোসাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা গিয়েছে, কয়েক হাজার মানুষ মিছিল করে ভোট কেন্দ্রে চলেছেন। আর পাশের বাড়ির ছাদ থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা ইইউ’র জনৈক পর্যবেক্ষক অবাক চোখে তা দেখছেন। মিছিলে ছিলেন রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরোর দল ইউনাইটেড সোসালিস্ট পার্টি অব ভেনেজুয়েলা (পিএসইউভি)-র নেতৃত্বাধীন গ্রেট প্যাট্রিয়টিক পোল (জিপিপি)-এর সমর্থকরা। ‘‘স্যাভিসমো (স্প্যানিশ শব্দ, নির্দেশ করে বামপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শকে) ঝড়ে বিরোধীরা উড়ে গিয়েছে, ’’ ২২ নভেম্বর কারাকাসে বিজয় মিছিলে সোচ্চারে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সিন্থিয়া রডরিগেজ (২১)। তাঁর কথারই প্রতিফলন দেখা গেল ভেনেজুয়েলার ইলেকটোরাল কাউন্সিল বা সিএনই’র তরফে প্রকাশিত সর্বশেষ ফলাফলেও। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৯২ শতাংশ ভোট গণনার শেষে ২৩টির মধ্যে ২০টি প্রদেশেই বড় ব্যবধানে এগিয়ে জিপিপি’র প্রার্থীরা। বামপন্থী জোটের প্রার্থীরা ৮৩ শতাংশ রাজ্যপালের আসনে জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে কোজেডেস এবং জুলিয়া প্রদেশে এগিয়ে বিরোধী জোট ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক টেবিল (এমইউডি)। নুইভা এস্প্রাটা প্রদেশে জয়ী হয়েছে নেইবারস ফোর্স পার্টি (এফভি)।
‘‘নির্বাচনে কোনও সমস্যা হয়নি।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা অবাধে ঘুরে ভোটদানের কাজ নিজেদের চোখেই দেখেছেন। এই জয় ভেনেজুয়েলার বিনম্র জনসাধারণের আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন, রোজই যাঁরা মার্কিন অবরোধের মুখে দিন কাটাচ্ছেন।’’ ২২ নভেম্বর ভোটের ফলাফল সামনে আসার পরে একথা বলেছেন রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরো। রবিবার ভেনেজুয়েলার ২৩টি প্রদেশের রাজ্যপাল, ৩৩৫ জন মেয়র, ২৫৩ জন জনপ্রতিনিধি এবং ২, ৪৭১ জন পৌর-প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য রাজধানী কারাকাস সহ সর্বত্রই ছিল সাজসাজ রব। ভোটের আগে থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের পক্ষ থেকে স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগ তোলা হচ্ছিল। সেই কারণে সিএনই ভোটে নজর রাখতে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার ব্যবস্থা করেছিল। রবিবার বিশ্বের ৫৫টি দেশ এবং ইইউ, রাষ্ট্রসঙ্ঘ (ইউএন) তথা কার্টার সেন্টারের মতো বেসরকারি সংস্থার ৩০০-র বেশি পর্যবেক্ষক সমগ্র নির্বাচনী প্রক্রিয়া ঘুরে দেখেন। কোথাও তাঁদের চলাচলের ক্ষেত্রে সরকার বা অন্য কারও পক্ষ থেকে বাধা সৃষ্টি করা হয়নি। নির্বাচনে মোট ভোটদাতার সংখ্যা ছিল প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট এবং ফলাফল প্রকাশের পরে দেশের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভেনেজুয়েলার জাতীয় সংসদের প্রেসিডেন্ট (এএন) জর্জ রডরিগেজ। ‘‘এই নির্বাচনে সব চেয়ে বড় হার হয়েছে হিংসার, ’’ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন তিনি। তিনি আরও জানান, ‘‘আমরা তাদের পরাজিত করেছি, যারা বলছিল, ভোট দেশে রাজনৈতিক জটিলতা মেটানোর সমাধান নয়। এরা মনে করেছিল, মানুষ ভোট দিতে উৎসাহী নয়। ২১ নভেম্বরের ভোটের সাফল্য তাদের একঘরে করে দিয়েছে।’’
ভোটের ফলাফল সামনে আসার পরেই রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরোকে অভিনন্দন জানান কিউবার রাষ্ট্রপতি মিগুয়েল দিয়াজ-কানেল। অভিনন্দন জানান চিলির আলেন্দে আন্দোলনের নেতা এস্তাবেন সিলভা। পাশাপাশি আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, চীন, ইরান, গণতান্ত্রিক কোরিয়া সহ বহু দেশের রাষ্ট্রপতি মাদুরোকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। এবারের ভোটে বিরোধী এমইউডি জোটের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত মেরিডা, তাচিরা, অ্যানজোয়াতেগুইয়ের মতো জায়গায় বামপন্থী পিএসইউভি ভালো ফল করেছে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে মিরান্ডা, কারাবোবো, বলিভার এবং আপুরেতে। ২২ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি মাদুরো টুইটে বলেছেন, ‘‘এই নির্বাচনের পরে আমরা দেশে শান্তি ও স্থিরতা ফেরাতে কাজ করব। ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিকাশ ও অগ্রগতির অভিমুখে চলার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হবে। জনাদেশে সেই নির্দেশ স্পষ্ট।’’