প্রতিবাদী মহিলাদের উপর তালেবানের হামলা

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

একতা বিদেশ ডেস্ক : তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলায় নারী প্রতিবাদীদের উপর হামলা করেছে তালেবান। ৮ সেপ্টেম্বর কাবুলের রাস্তায় আফগানিস্তানের অন্তর্র্বতী সরকার যেখানে সকল প্রতিনিধিই পুরুষ তা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় নারীদের চাবুক ও লাঠি দিয়ে মারল তালেবান প্রশাসন। এক ভিডিওতে দেখা যায় নারী বিক্ষোভকারীরা আফগানিস্তানের মহিলাদের লড়াই দীর্ঘজীবি হওয়ার আহবান জানাচ্ছে। অনেকে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ছিল যেখানে লেখা কোনো সরকার মহিলাদের উপস্থিতি অস্বিকার করতে পারে না। আমরা আমাদের স্বাধীনতার দাবি বার বার জানিয়ে আসব। সরকারে কোনো মহিলা প্রতিনিধি নেই এর প্রতিবাদ জানাতেই পথে নামে আফগান মহিলারা। বিক্ষোভে তারা বলেন, একটি সরকার যেখানে সকালের সমান অধিকার নেই সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকারও কোনো অধিকার নেই। এদিকে তালেবানের অন্তর্র্বতী সরকার গঠনের পরে ‘সর্বোচ্চ নেতা’ হাবিবুল্লাহ আখুন্দজাদার নামে প্রচারিত প্রথম বিবৃতিতে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ আফগানিস্তানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ৭ সেপ্টেম্বরই অন্তর্র্বতী মন্ত্রীসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেছে তালেবান। এই তালিকা থেকেই স্পষ্ট রক্ষণশীল, কট্টরপন্থীদেরই নিয়ে সরকার গঠন করা হয়েছে। এই সরকারের বৈধতা কী, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন থাকলেও সতর্ক প্রতিক্রিয়াই দিয়েছে বিভিন্ন দেশ। হাবিবুল্লাহ আখুন্দজাদা তালেবানের ‘সর্বোচ্চ নেতা’ হিসাবে কাজ করবেন, তিনি সরাসরি সরকারি পদে নেই। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কাজ করবেন মোল্লা মহম্মদ হাসান আখুন্দ। তালেবানের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য বজায় রাখতে দু’জনকে উপপ্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালানোর প্রধান সূত্রধর আবদুল গনি বারাদর ছাড়াও এই পদে থাকছেন আবদুল সালাম হানাফি। ২৫ জন মন্ত্রীর নাম জানানো হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হচ্ছেন সিরাজুদ্দিন হাক্কানি। তিনি হাক্কানি নেটওয়ার্ক গোষ্ঠীর প্রধান। তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের পুত্র মোল্লা ইয়াকুব প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হচ্ছেন। অর্থমন্ত্রী হয়েছেন মোল্লা হেদায়েতুল্লাহ বদরি। আইনমন্ত্রী হচ্ছেন আবদুল হাকিম, তথ্যমন্ত্রী হয়েছেন খইরুল্লা খইরখাওয়া। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গেও থাকছেন দুই উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী দোহায় তালেবানের দপ্তরের উপপ্রধান শের মহম্মদ আব্বাস স্তানেকজাই ও এতদিন তালেবানের মুখপাত্র হিসাবে কাজ করা জাবিউল্লাহ মুজাহিদ। গোয়েন্দা প্রধান হচ্ছেন মুল্লা আবদুল হক ওয়াসিক, সেনাপ্রধান কারি ফাসিউদ্দিন। পর্যবেক্ষকদের প্রাথমিক বিশ্লেষণ, তালেবানের প্রতিষ্ঠিত কাঠামোর মধ্যেই মন্ত্রীসভা তৈরি করা হয়েছে। এঁদের অনেকেই দু’দশক আগে তালেবানের সরকারে বা প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। অন্যান্য রাজনৈতিক অংশেরও কাউকে নেওয়া হয়নি। কোনও মহিলা নেই এমনকি সংখ্যালঘু হাজারাদেরও কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই এই মন্ত্রীসভায়। জাতিগত পরিচয়ে তিনজন ছাড়া সকলেই পাশতুন। আখুন্দজাদার নামে প্রচারিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তালেবান মানবাধিকার রক্ষা করবে। সংখ্যালঘুদের অধিকারের মর্যাদা দেবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসলামী আইন মেনেই সরকার চলবে। শিক্ষার ওপরে জোর দেওয়া হবে কিন্তু ইসলামী শিক্ষা ও আধুনিক বিজ্ঞান একসঙ্গেই পড়ানো হবে। ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গে বিরোধ নেই এমন সমস্ত আন্তর্জাতিক চুক্তিকে মান্যতাও দেওয়া হবে। তালেবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সমস্ত বিদেশি দূতাবাস, তাদের কর্মীরা, বিদেশি নাগরিক এবং বাণিজ্য নিরাপদ থাকবে। মেধাবী, পেশাদার বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপকদের মর্যাদা দেওয়া হবে। কোনও আফগানকেই দেশ ছেড়ে না যেতে অনুরোধও করা হয়েছে। বিবৃতিতে মিডিয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে, মিডিয়ার স্বাধীনতা থাকবে, আবার একসঙ্গেই বলা হয়েছে ইসলামী মূল্যবোধ, জাতীয় স্বার্থের কথা ভেবে সম্প্রচার করতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত হতে শুরু করবে। বিবৃতিতে অনেক কিছুই বলা হলেও একেবারেই অনুপস্থিত মহিলাদের কথা। মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেবার সময়েও উচ্চারণ করা হয়নি মহিলাদের কথা। অথচ তালেবানের জমানায় মহিলাদের পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়েই আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি। অন্তর্র্বতী সরকার গঠন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয় বলেছে, মন্ত্রীসভায় এমন কয়েকজনের নাম আছে যা নিয়ে আমেরিকা উদ্বিগ্ন। সমগ্র তালেবানকেই ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা দিয়েও তাদের সঙ্গেই চুক্তি করেছে মার্কিন প্রশাসন। এখন ব্যক্তি চিহ্নিত করে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি ওয়াশিংটন বলেছে, তালিবান কী করছে তার ওপরে তাদের বিচার করা হবে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, এই মন্ত্রীসভা গঠনে তিন সপ্তাহের নৈরাজ্যের অবসান হলেও চীন চায় প্রতিনিধিত্বমূলক, ব্যাপক ভিত্তিক সরকার। মডারেট ও বিবেচনাপ্রসূত নীতি নিয়ে আফগানিস্তানকে চলতে হবে। প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। অন্তর্র্বতী সরকার দেশের সব অংশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে বলে চীন আশা করেছে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..