একতা বিদেশ ডেস্ক :
কয়লার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন করতে চলেছে পোল্যান্ড। প্রতিবেশী দেশটির এ উদ্যোগে বড় রকমের বিপর্যয়ের ঝুঁকি দেখছে জার্মানি। পোল্যান্ডের বিদ্যুৎ খাতের শতকরা ৭০ ভাগই কয়লা নির্ভর। ফলে ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দূষণও সবচেয়ে বেশি। অথচ একদিকে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে, অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা।
দেশের সবচেয়ে বড় বাদামি কয়লার খনি ২০৩৫ সালের পর ‘খালি’ হয়ে যাবে। ওই খনির কয়লা পোল্যান্ডের ২০ ভাগ বিদ্যুতের চাহিদা মেটায়। এছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি থাকার কারণে সে দেশের গ্যাস দিয়ে শতকরা পাঁচ ভাগ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হতো। এ বছরই শেষ হতে চলেছে দ্বিপাক্ষিক সেই চুক্তির মেয়াদ। সাম্প্রতিক সময়ে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি ঘটায় চুক্তি নবায়ন করবে না পোল্যান্ড। পোল্যান্ড মনে করে, ভবিষ্যতে নিশ্চিত বিপর্যয় এড়াতে অবিলম্বে কয়লার ওপর নির্ভরতা কমানো জরুরি। তাই পারমাণবিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে পলিটিকা এনার্গেৎসনা পোলস্কি (পিইপি) পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে সরকার। এর আওতায় আগামী ২০২৬ সাল থেকে দেশের দুটি স্থানে ছয়টি রিয়্যাক্টর তৈরির কাজ শুরু হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩৩ থেকে ২০৪৩ সালের মধ্যে সবগুলো রিয়্যাক্টপুরোপুরি কাজ শুরু করবে।
রিয়্যাক্টরগুলো তৈরি করতে যে ৩০ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে, তা নিজের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় কাজটি শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। গত বছর পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদা আর যুক্তরাষ্ট্র্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনাও হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্পের বিদায়ে পরিস্থিতি বদলে গেছে। পরিবর্তিত পরিস্তিতিতে পোল্যান্ডের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে ফ্রান্স। এখন ফ্রান্সের সহায়তা নিয়েই পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে পোল্যান্ড। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে জার্মানিতে। গত জানুয়ারিতে জার্মানির সংসদে বিশেষজ্ঞদের তৈরি করা একটি প্রতিবেদন পেশ করেছে গ্রিন পার্টি। সেখানে বলা হয়েছে, পোল্যান্ড যেখানে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট করার পরিকল্পনা করেছে, সেই জায়গাটি জার্মানির সীমান্ত সংলগ্ন এর ফলে সেখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে জার্মান নাগরিকদের, বিশেষ করে বার্লিন এবং হামবুর্গের মানুষদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বড় রকমের আশঙ্কা রয়েছে। বুন্ডেসটাগের পরিবেশ বিষয়ক কমিটির চেয়ারপার্সন উরসুলা কোটিং-উল ডয়চে ভেলেকে বলেন, সেখানে দুর্ঘটনা ঘটলে জার্মানির অন্তত ১৮ লাখ মানুষকে সরিয়ে নিতে হবে। পোল্যান্ড অবশ্য দাবি করছে, তাদের পক্ষ থেকে পরিবেশগত ঝুঁকির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে এবং তাতে তেমন কোনো ঝুঁকির আশঙ্কা ধরা পড়েনি। এদিকে এক বিবৃতিতে জার্মানির পরিবেশ মন্ত্রণালয় ডয়চে ভেলেকে বলেছে, ‘‘পোল্যান্ড পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন শুরু করলে তার ফলে জার্মানির মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে সরকার।’’