
একতা প্রতিবেদক :
২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন ময়দানে লাখো মানুষের মহাসমাবেশে বোমা হামলা চালায় প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতক চক্র। এই হামলায় খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার সিপিবি নেতা কমরেড হিমাংশু মণ্ডল, খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার সিপিবি নেতা ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা কমরেড আব্দুল মজিদ, ঢাকার ডেমরা থানার লতিফ বাওয়ানি জুটমিলের শ্রমিক নেতা কমরেড আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের কমরেড মোক্তার হোসেন ঘটনাস্থলেই এবং খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কমরেড বিপ্রদাস রায় আহত হয়ে ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ওই বছরেই ২ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। বোমা হামলায় শতাধিক কমরেড আহত হন।
২০ জানুয়ারির শহীদদের স্মরণে সারাদেশে পালিত বিভিন্ন কর্মসূচির খবর:
চট্টগ্রাম: শহীদদের প্রতি স্মরণে আলোচনা সভার আয়োজন করে সিপিবি চট্টগ্রাম জেলা। কেন্দ্রীয় সদস্য মৃণাল চৌধুরী সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফরিদুল ইসলাম, রেখা চৌধুরী, অজয় সেন, অমিতাভ সেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ১৯ বছর পর এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হলেও এই হামলার পেছনের বিভিন্ন শক্তিকে চিহ্নিত করা হয়নি। এজন্য উচ্চ পর্যায়ের ট্রুথ কমিশন গঠন করতে হবে। হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
সিপিবির নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বোমা-হামলায় নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। সিপিবি সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগিতা করছে। এসব পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে।
খুলনা: ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন হত্যাকাণ্ড দিবস উপলক্ষে খুলনায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র খুলনা মহানগর কমিটির উদ্যোগে গত ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে শ্রদ্ধানুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময়ে দলের মহানগরীর বিভিন্ন থানা কমিটি, ওয়ার্ড শাখা এবং ছাত্র-যুব সংগঠনসহ বিভিন্ন গণসংগঠন ফুল দিয়ে দলীয় কার্যালয়ে অস্থায়ী বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মহানগর সভাপতি এইচ এম শাহাদতের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মোঃ বাবুল হাওলাদারের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন- খুলনা জেলা সভাপতি ডা. মনোজ দাশ, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এ রশীদ, জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. এম এম রহুল আমিন, সোনাডাঙ্গা থানা সভাপতি নিতাই পাল, সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী হাওলাদার, সদর থানা সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নিত্যানন্দ ঢালী, সিপিবি নেতা সুতপা বেদজ্ঞ, মিজানুর রহমান বাবু, অ্যাড. সুব্রত কুণ্ডু, ওয়াহেদুর রেজা বিপলু, রঙ্গলাল মৃধা, তোফাজ্জেল হোসেন, ভূষণ তরুন সরকার, সাইদুর রহমান বাবু, অ্যাড. প্রীতিশ মণ্ডল, জাহানারা আক্তারী, মিনু পাল, শাহিনা আক্তার, হুমায়ুন কবির, যুবনেতা মহানগর আহ্বায়ক আফজাল হোসেন রাজু, রামপ্রসাদ রায়, ছাত্রনেতা সৌমিত্র সৌরভ, জয় দাস, শাইমা আলী, ঐশিজ্যোতি গোলদার, নাহিদ হাসান, এল এম আরমান, আবির বিশ্বাস প্রমুখ।
অপরদিকে বটিয়াঘাটার বসুরাবাদ গ্রামে সকালে পল্টন হত্যাকাণ্ডে নিহত কমরেড হিমাংশু মণ্ডলের সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, শোক র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বটিয়াঘাটা উপজেলা সভাপতি সমীরন গোলদারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- সিপিবি কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা জেলা সভাপতি ডা. মনোজ দাশ, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এ রশীদ, বটিয়াঘাটা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই গাইন, বটিয়াঘাটা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক অশোক বিশ্বাস, দাকোপ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক কিশোর রায়, সিপিবি নেতা সুখেন রায়, আব্দুল হালিম প্রমুখ।
নারায়ণগঞ্জ: ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র মহাসমাবেশে বোমা হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ২১তম বার্ষিকীতে শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির উদ্যোগে গত ২০ জানুয়ারি বুধবার বিকাল চারটায় জেলা কার্যালয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন শিবনাথ চক্রবর্তী, বিমল কান্তি দাস, আঃ হাই শরীফ, শাহানারা বেগম, ইকবাল হোসেন, শোভা সাহা, সুজয় রায় চৌধুরী বিকু, নূরুল ইসলাম, আবুল হোসেন, মৈত্রী ঘোষ, আলমগীর হোসেন, বিজয় কর্মকার, আব্দুস সোবহান, নাসির উদ্দিন ও কবির হোসেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০ জানুয়ারির পল্টন ময়দানের বোমা হামলার পর আলামত সংগ্রহ না করে সিপিবির নেতাকর্মীদের তৎকালীন আওয়ামী সরকারের পুলিশ বাহিনী লাঠিচার্জ করে ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমনকি পুলিশ কমিশনার বলেছিলেন, এই হামলা দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে হয়েছে! আওয়ামী লীগের সমাবেশে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরও বিএনপি সরকার একই কাজ করেছিল এবং একই কথা বলেছিল।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বর্তমানে দেশ ‘৯৯ বনাম ১’ এইভাবে বিভক্ত। এই ৯৯ ভাগ মানুষ যাতে তাঁরা তাঁদের দাবি-দাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে না পারে তার জন্য নানাভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। সেদিন কমিউনিস্টদের স্তব্ধ করার জন্য বোমা হামলা চালানো হয়েছিল যাতে কমিউনিস্ট পার্টি মানুষকে নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। হামলার পর জনগণের আরো বেশি অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সিপিবি এগিয়ে যাচ্ছে। অশুভ শক্তির হীন উদ্দেশ্য সফল হয়নি। এখনও নানা ষড়যন্ত্র চলছে। দেশ এক গভীর সংকটের মধ্যে অতিবাহিত করছে। গণতন্ত্রহীনতা, লুটপাটতন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা আজ চরম আকার ধারণ করেছে। এই অবস্থা থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হলে বামপন্থিদের এগিয়ে আসতে হবে।