‘লকডাউনের সুযোগে’ ঢাবিতে নির্বিচারে গাছ কর্তন

প্রতিবাদে মানববন্ধন ছাত্র ইউনিয়নয়নের

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
একতা প্রতিবেদন: লকডাউনে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে নির্বিচার গাছ কেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করছে অভিযোগ করে এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। গত ১৮ মে বেলা ১১টার দিকে বাংলা একাডেমির সামনে সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা মেনে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি জয় রায়, সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম। ছাত্রনেতারা বলেন, ‘আমরা যখন বলি, পৃথিবীটা মরে যাচ্ছে একটু করে করে, তখন আমাদেরকে উন্নয়ন আর অর্থনীতির সূচক দেখানো হয়। বলা হয়, পরিবেশ একটা গেলে আরেকটা আসবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা যখন বলি, আমার বিশ্ববিদ্যালয়কে তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো থাকতে দাও, বিশ্ববিদ্যালয় গাবতলী নয়, যে এখানে বাস ট্রাক থাকবে, বিশ্ববিদ্যালয় পল্টন নয়, যে এখানে যুবলীগের জন্মদিন করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় কোনো মাছের বাজার নয়, যে বাজার উচ্ছেদ করে মেট্রো রেলের পিলার বসাতে হবে, তখন আমাদেরকে জায়গার সংকট দেখানো হয়। বলা হয়, ঢাকা শহরে স্পেই নাই কোনো।’ ‘আর আমরা যখন বলি, চীন আর ইতালিতে হাজারে হাজারে মানুষ মরছে, তখন আমাদেরকে ভাড়া করা টেলিভিশনের মাধ্যমে জানানো হয়, গরমের দেশে করোনা হয় না। আমাদের সক্ষমতা ছিলো না তা কিন্তু নয়। যেই দেশের সরকার একটা কার্টুন আঁকার জন্য কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে গ্রেফতার করতে পারে, যেই দেশের সরকার বেনাপোল থেকে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে ধরে নিয়ে আসার নাটক করতে পারে, সেই দেশের সরকার চাইলেই পারতো করোনার প্রস্তুতি নিতে, চাইলেই পারতো মেট্রো রেলের রাস্তা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরিয়ে নিতে। কিন্তু তারা তা করে নাই। কারণ আমাদের স্বার্থ তারা দেখে না। সাধারণ মানুষের ক্ষতি হলে তাদের কীই বা আসে যায়! এই যে মেট্রোরেল, এই মেট্রোরেল শেরাটন হোটেলের উপর দিয়ে যেতে পারে নাই। কারণ ওইখানে যায় বড়লোকেরা। মেট্রোরেল যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গলার উপর দিয়ে, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে চিন্তা করে গরীবেরা।’ ছাত্রনেতারা বলেন, এই সরকারের ক্ষমতার অভাব নেই, অভাব সদিচ্ছার। এই সরকার চায় বিশ্ববিদ্যালয়কে জাহান্নাম বানিয়ে তুলতে, জাহান্নাম বানানোর জন্যই সে পড়তে আসা নিরীহ ফার্স্ট ইয়ারের একটা ছেলেকে চার বছরে পরিণত করে ছাত্রলীগের পোষা সন্ত্রাসীতে। জাহান্নাম বানানোর জন্যই একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে ছুরির মতো মেট্রোরেল চলে যায়। মানববন্ধনে বন্ধের সময় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ফি নেয়ার কড়া সমালোচনা করেন। তারা বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের এই করোনা চলাকালীন সময়েও হাজার হাজার টাকা ফি দিতে হচ্ছে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। ‘ওই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির মালিক যেই বিজনেসম্যানরা, আমাদের সরকার চালায় যেই বড় বড় কোটিপতিরা, তারা এই আন্দোলনকে পাত্তা দিচ্ছে না। কেনো জানেন? কারণ, ওই সেমিস্টার ফি তাদের এক ঘন্টার উপার্জনের সমান। তাদের কাছে আমরা হাতের ময়লা হয়ে গেছি, চাইলেই যেনো তারা ঝেড়ে ফেলে দিতে পারে। তারা নিজেরা লকডাউন পালন করছে এসি লাগানো প্রাসাদে বসে, গণভবন, বঙ্গভবন, নাট্যভবনে বসে, আর আমরা অপেক্ষা করছি যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর। গার্মেন্টস শ্রমিকদের শত কিলোমিটার হাঁটিয়ে আনা হয়েছে। করোনার টেস্ট করাতে এসে এই শাহবাগে, পিজি হাসপাতালের সামনে অসহায় রোগীরা রাস্তায় পড়ে আছে, কাঁদছে, সেখানেই শুয়ে থাকছে পেপার বিছিয়ে। কেউ কেউ মারাও যাচ্ছে। মারা যাচ্ছে বাংলাদেশ।" সভাপতির বক্তব্যে ফাহাদ বলেন, যেই সরকার এইরকম এক মহামারীর মাঝেও মানবাধিকার কর্মী দিদার ভূঁইয়াকে, লেখক আহমেদ মোশতাককে গ্রেফতার করতে পারে, সে চাইলেই পারে মেট্রোরেলের স্টেশন বিশ্ববিদ্যালয়ে না করতে। সে চাইলেই পারে দেশের সকল জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে। ‘আমরা আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বুকের উপর রেললাইন বানাবেন না। আমাদেরকে বলা হয়েছে, এটা নাকী আমাদের ভালোর জন্যই। কোথায় সেই ভালো? তখন তারা বললো, মেট্রোরেলটা হতে দাও, স্টেশন আমরা করবো না। আর আজ আমরা দেখি, টিএসসিতে স্টেশন করার জন্য এই করোনার মাঝেই কি ব্যস্ততা! যাতে স্টুডেন্টরা ফিরে আসার আগেই সর্বনাশটা করে ফেলা যায়,’ বলেন তিনি।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..