নিজস্ব নিয়মেই ব্যবসা-বাণিজ্য করবে ব্রিটেন

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

একতা বিদেশ ডেস্ক : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ভবিষ্যতে ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বাণিজ্যের রূপরেখা তুলে ধরলেন। তিনি ইইউ-র সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের বদলে নিজস্ব বিধিনিয়মের পক্ষে সওয়াল করেছেন। ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ৩১ জানুয়ারি ব্রেক্সিট কার্যকর হবার পর চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত সম্পর্কের মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। ভবিষ্যৎ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে এই অন্তর্র্বর্তীকালেই ঐকমত্য অর্জনের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে মার্চ মাস থেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হবার কথা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার তার আগেই তর্জন গর্জন শুরু করে দিয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ইউরোপ সংক্রান্ত উপদেষ্টা ডেভিড ফ্রস্ট ১৭ ফেব্রুয়ারি ব্রাসেলসে বলেন, ব্রিটেনকে ভবিষ্যতেও ইইউ বিধিনিয়ম মেনে চলার হুমকি দেওয়া যাবে না। তাঁর মতে, ইইউ-র সঙ্গে এ বিষয়ে ঐকমত্য সম্ভব না হলে অস্ট্রেলিয়ার আদলে ব্রিটেনও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাঠামোর আওতায় ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করতে প্রস্তুত। ফ্রস্ট বলেন, ব্রিটেন ইইউ-র সঙ্গে এক সহজ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায়। ইইউ শুরু থেকেই ব্রিটেনের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির কাঠামো স্পষ্ট করে দিয়েছে। ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন সম্প্রতি লন্ডনে এমন বোঝাপড়ার কাঠামো তুলে ধরেছেন। তাঁর সাফ কথা, যে কোনো পরিস্থিতিতেই প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে কোনোরকম বৈষম্য থাকলে চলবে না। বিশেষ করে পরিবেশ ও শ্রমের ক্ষেত্রে ইইউ-র বিধিনিয়ম মেনে চললেই ইইউ-র বাজারের নাগাল পাওয়া সম্ভব। উল্লেখ্য, এখনো পর্যন্ত ব্রিটেনের বাণিজ্যের সিংহভাগই ইইউ দেশগুলির সঙ্গে চলে আসছে। ভবিষ্যতে শুল্ক, সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বাধা সৃষ্টি হলে ব্রিটেনের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ পূর্বাভাস দিচ্ছেন। বরিস জনসন এমন শর্ত মেনে নিতে প্রস্তুত নন। তাঁর মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার মূল কারণই ছিল নিজস্ব শর্তে বাকি বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চালানো। আগের মতো ইইউ-র বিধিনিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকলে ব্রিটেনের সেই স্বাধীনতা খর্ব হবে। তাই ব্রিটেন নিজস্ব নিয়মের ভিত্তিতেই সব দেশ ও জোটের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়। এমন প্রেক্ষাপটে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে দুই পক্ষের মধ্যে যে মনোমালিন্য দেখা গিয়েছিল, বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনার ক্ষেত্রে সেই পরিবেশ আরও বিষাক্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে চূড়ান্তভাবে ব্রেক্সিট কার্যকরের পর থেকে কম দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের আর ভিসা দেবে না যুক্তরাজ্য, এমন একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এতে নিয়োাগকর্তাদের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, তারা যেন ইউরোপ থেকে আসা ‘সস্তা শ্রমিক’-এর ওপর নির্ভর না করে কর্মী ধরে রাখা এবং অটোমেশন প্রযুক্তি উন্নয়নের ওপর জোর দেন। স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এর বাইরের যেসব নাগরিক যুক্তরাজ্যে আসতে চায়, তাদের ৩১ ডিসেম্বর ইউকে-ইইউ ফ্রি মুভমেন্ট বন্ধ হওয়ার পর একই মাপকাঠিতে যাচাই করা হবে। যুক্তরাজ্যে কাজ করার অনুমতি পেতে হলে সব মিলিয়ে অভিবাসীদের ৭০ পয়েন্ট নিশ্চিত করতে হবে। এরমধ্যে যোগ্যতা, বেতন ও যে খাতে কর্মীর অভাব রয়েছে এমন কোনও খাতে কাজ করলেও পয়েন্ট পাওয়া যাবে। তবে ব্রিটেন জানিয়েছে, তারা কম দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিকদের অভিবাসনের জন্য পথ তৈরি করবে না। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাধাহীন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টির সঙ্গে ‘খাপ খাইয়ে’ চলে। ব্রিটেন জানিয়েছে, নিয়োগকর্তারা যেন অভিবাসন পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল না থেকে যেন কর্মী ধরে রাখা, উৎপাদনশীলতা ও প্রযুক্তির উন্নয়নে বিনিয়োগ করে। নতুন অভিবাসন নীতির অধীনে দক্ষ কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি কম দক্ষ শ্রমিকদের হার কমানোর ব্যাপারে সমন্বয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে আসা অভিবাসীদের জন্য কিছু নিয়ম শিথিল হবে। যেমন শ্রমিকদের দক্ষতার নির্ধারিত মান না থাকা এবং সর্বনিম্ন বেতনের হার কম হওয়া। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো থেকে যারা যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে চাইবেন তাদের জন্য নিয়ম কঠিন হবে। দর্শনার্থীরা ভিসা ছাড়া ছয় মাসের জন্য থাকতে পারবেন। তবে কাজ করতে পারবেন না। যাদের দক্ষতা রয়েছে তাদের চাকরির অনুমোদন নিয়ে আসতে হবে এবং অভিবাসনের প্রয়োজনীয় ৭০ পয়েন্ট পেতে হবে। রেস্টুরেন্ট, হোটেল, সেবা খাত এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় দক্ষতাহীন কোনও অভিবাসী চাকরি করতে পারবে না। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, সব অভিবাসী অনির্দিষ্টকালের জন্য যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত আয় সংক্রান্ত সুবিধা ছাড়া অন্য কোনও সুবিধা পাবে না। বর্তমানে ইউরেপীয় ইউনিয়নের নাগরিকরা যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক সুবিধা চাইতে পারেন যতদিন তারা ‘অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয়’ থাকবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকরা সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হন যখন তাদের যুক্তরাজ্যে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। এটি সাধারণত পাঁচ বছরের মধ্যেই হয়ে থাকে। যুক্তরাজ্যে যেতে আগ্রহী দক্ষ শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ৩০ হাজার পাউন্ড থেকে নামিয়ে ২৫ হাজার ৬০০ পাউন্ড করা হবে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..