ইহুদি বসতির সাহায্যকারী শতাধিক কোম্পানির তালিকা দিল জাতিসংঘ

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
একতা প্রতিবেদক : ইসরায়েলের দখলে থাকা পশ্চিম তীরের ইহুদি বসতির ব্যবস্থাপনা ও বিস্তৃতিতে সহায়তাকারী কোম্পানিগুলোর একটি তালিকা দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়। দীর্ঘ প্রতিক্ষিত এক প্রতিবেদনে তারা যে ১১২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছে তার মধ্যে এয়ারবিএনবি, বুকিং ডটকম, এক্সপেডিয়া গ্রুপ ও মটোরোলা সল্যুশনের মতো কোম্পানিও আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওই অবৈধ বসতির যোগসাজশ আছে, যৌক্তিক ভিত্তি থেকেই জাতিসংঘ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে বলে জানিয়েছে বৈশ্বিক এ সংস্থাটির মানবাধিকার হাই কমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)। ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এ প্রতিবেদনকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের বিজয়’ অ্যাখ্যায়িত করেছে ফিলিস্তিনিরা। অন্যদিকে ইসরায়েলিরা একে বলেছে ‘লজ্জাজনক’। ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম দখলের পর থেকে সেখানে এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠা ১৪০টির মতো বসতিতে প্রায় ৬ লাখ ইহুদি বসবাস করছে। এ বসতিগুলো আন্তর্জাতিক আইনে ‘অবৈধ’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ইহুদি বসতি ও স্থাপনা পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমকে নিয়ে তাদের আকাক্সিক্ষত স্বাধীন রাষ্ট্রকে বাস্তবে রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে জানিয়ে ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরেই বসতিগুলোর উচ্ছেদ চাইছে। দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প একটি পরিকল্পনাও দিয়েছেন, যা ইসরায়েলকে তাদের বসতি আরও বিস্তৃত করার সুযোগ করে দিতে পারে বলে অনুমান বিশ্লেষকদের। গত সপ্তাহে জাতিসংঘে দেওয়া এক ভাষণে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ফের ট্রাম্পের ওই পরিকল্পনাটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ পরিকল্পনা মানলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রটি ‘সুইস পনিরের’ মতো দেখাবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের পরিকল্পনাকে ‘মধ্যপ্রাচ্য, ইসরায়েল রাষ্ট্র ও ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে সেরা পরিকল্পনা’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। ২০১৬ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল বসতিগুলোতে নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কোম্পানিগুলোর একটি তালিকা বানাতে ওএইচসিএইচআর-কে দায়িত্ব দেয়। যেসব কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে কোম্পানিগুলোর তালিকা করতে বলা হয়েছিল, তার মধ্যে আছে- পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের কাঁটাতার ও বসতির বিস্তৃতিতে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ, সেখানে থাকা বাড়িঘর ও স্থাপনা, কৃষিজমি, গ্রিনহাউস, জলপাইয়ের বাগান ও শস্য ধ্বংসে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ, বসতিগুলো টিকিয়ে রাখতে ও এর দেখভালের জন্য যাতায়াতসহ বিভিন্ন সেবা ও পরিষেবা নিশ্চিত করা, বসতিগুলোর আধুনিকায়ন, ব্যবস্থাপনা ও বিস্তৃতির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে এমন ব্যাংকিং ও বিভিন্ন আর্থিক কর্মকাণ্ড, যেমন গৃহ নির্মাণ ও ব্যবসার জন্য ঋণ দেওয়া। ৩২১টি কোম্পানির কর্মকাণ্ডের পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন শেষে ওএইচসিএইচআর ১১২টি কোম্পানির সঙ্গে ইহুদি বসতিগুলোর ব্যবস্থাপনা ও সেগুলোর বিস্তৃতির যোগসাজশ আছে বলে জানায়। তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯৪টিই ইসরায়েলভিত্তিক; বাকিগুলো যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবার্গ, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের। ইহুদি বসতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির তালিকা নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্তের দায়িত্ব মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্র মন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোকে ইহুদি বসতিতে তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধে নির্দেশনা জারি করতে মালিকি মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, কোনো দেশ এ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা নিলে তেলআবিবও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাবে। ‘যে আমাদের বয়কট করবে, আমরাও তাদের বয়কট করবো। আমরা এ ধরনের নীচ প্রচেষ্টাকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করছি,’ বলেছেন তিনি। ওএইচসিএইচআরের তালিকাকে ‘স্পষ্টতই এন্টি-সেমেটিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন’ হিসেবে অভিহিত করেছে ইহুদি বসতিগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী ইয়েশা কাউন্সিল। অন্যদিকে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ‘অবৈধ বসতিকে সাহায্য করার মানে হচ্ছে যুদ্ধাপরাধের দালালি, জাতিসংঘের তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোকে এ সংক্রান্ত নোটিস দেয়া উচিত।’

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..